Homeঅর্থনীতিবন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালী, ত্রাণ গেছে ফেনীতে: সিপিডি

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াখালী, ত্রাণ গেছে ফেনীতে: সিপিডি


দেশের দক্ষিণের ১১ জেলায় গত আগস্টের বন্যা অন্তত ১৪ হাজার ৪২১ কোটি টাকার ক্ষতি করে দিয়ে গেছে বলে ধারণা দিয়েছে সিপিডি। ক্ষতির এই পরিমাণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ বলে মনে করছে সংস্থাটি।

এ ছাড়া তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ত্রাণ বিতরণে কোনও সমন্বয় দেখা যায়নি। তাতে দেখা গেছে, বেশ কিছু মানুষ একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছে এবং অনেকেই কোনও ত্রাণ পায়নি। আর বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা নোয়াখালী হলেও, ত্রাণ বেশি গেছে ফেনীতে।

রবিবার (৬ অক্টোবর) ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুল ধরে এসব তথ্য জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ত্রাণ হিসেবে চাল, খাবার, শিশুখাদ্য, পশুখাদ্য ও নগদ অর্থসহায়তা দেওয়ার তথ্য দিয়েছে। এ চারটি বিষয় নিয়েই প্রতিবেদনটি করেছে সিপিডি।

সিপিডির গবেষকরা জানান, বন্যায় নোয়াখালী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারি উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি ত্রাণ গেছে ফেনীতে, যার আর্থিক পরিমাণ ১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

ফেনীতে বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা ১০ লাখ, আর নোয়াখালীতে ১৬ লাখ ৪ হাজার ৩০০ জন। নোয়াখালীতে ত্রাণ গেছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার, যা জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

কুমিল্লায় ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই জেলা ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তিন জেলার মধ্যে ফেনীতে মাথাপিছু সহায়তার পরিমাণ ১৬৫ টাকা ৮০ পয়সা, কুমিল্লায় ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ৯০ পয়সা।

অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হবিগঞ্জে মাথাপিছু সহযোগিতার পরিমাণ ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। এ জেলায় ২০ হাজার ৮৪০ জন বন্যাদুর্গত হয়েছিলেন।

আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাথাপিছু সহযোগিতার পরিমাণ এক হাজার ৮৪ টাকা, চট্টগ্রামে তিন হাজার ৯৪৭ টাকা, আর সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে ফাহমিদা খাতুন বলেন, নোয়াখালীতে ১৬ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতিজন পেয়েছে গড়ে প্রায় ৯৩ টাকা। অথচ সিলেটে বন্যাদুর্গতের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার, ক্ষতির পরিমাণ ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সেখানে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার। প্রতিজনে গড়ে ত্রাণ পেয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

গবেষণা সংস্থাটি বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে মাথাপিছু সরকারি সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৬২ টাকা ১০ পয়সা, নোয়াখালীতে ৯২ টাকা ১০ পয়সা, কুমিল্লায় ১৩৬ টাকা ৭০ পয়সা ও সিলেটে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৩২০ টাকা।

সরকারি অর্থ বণ্টনে এমন ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিডি বলেছে, হয় এটা বণ্টনে সমস্যা, নয়তো তথ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিতে বড় ধরনের ত্রুটি আছে।

সিপিডির তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও বনায়ন খাতে। আপাত হিসাবে তার পরিমাণ ৫ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ক্ষতি অবকাঠামো খাতে, যা সার্বিক ক্ষতির ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া আবাসন বা ঘরবাড়ির ক্ষতির পরিমাণ দুই হাজার ৪০৭ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

তথ্য আরও বলছে, মোট ক্ষতির মধ্যে ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ সড়কের, ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ শস্যের, ১৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ আবাসনের, ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ মৎস্যের এবং ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে অন্যান্য খাতে।

বন্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে নোয়াখালীতে। সেখানে ক্ষতির অঙ্ক ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষতির ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া কুমিল্লায় ৩ হাজার ৩৯০ কোটি, ফেনীতে ২ হাজার ৬৮৩ কোটি, চট্টগ্রামে এক হাজার ৬৭৬ কোটি ৯৪ লাখ, লক্ষ্মীপুরে এক হাজার ৪০৩ কোটি ৯১ লাখ, মৌলভীবাজারে ৫০৬ কোটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ কোটি, হবিগঞ্জে ১৪৩ কোটি ৫৯ লাখ, খাগড়াছড়িতে ১২৭ কোটি ২৩ লাখ, কক্সবাজারে ১০০ কোটি এবং সিলেটে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে হিসাব করেছে সিপিডি।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামাল প্রমুখ।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত