মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সমুদ্রে মাছ ধরায় নিয়মিত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এবার ৭ দিন কমিয়ে ৫৮ দিন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। দেশের মৎস্যজীবীদের জীবিকা তথা জাতীয় স্বার্থরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি করছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে।
মৎস্যসম্পদের টেকসই আহরণের লক্ষ্যে নিয়মিত সরকারি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও একটি কারণে বাংলাদেশের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। তাঁরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, তখন প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরেন। তাঁদের কেউ কেউ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করেন। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্যজীবীরা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মিলিয়ে নিষেধাজ্ঞার সময় ঠিক করার দাবি করলেও তা মানা হয়নি। এ পর্যন্ত প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরা বন্ধ থেকে আসছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতের আওতাধীন বঙ্গোপসাগর এলাকায় ৬১ দিনের নিষেধাজ্ঞা ১৫ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৪ জুন শেষ হয়। এত দিন বিষয়টি দৃশ্যত উপেক্ষিত থাকার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মৎস্যজীবী প্রতিনিধিসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে সাগরে মাছ ধরায় বিধিনিষেধ হ্রাস তথা নিষেধাজ্ঞার সময় পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদপ্তর।
এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের জেলেরা সুফল পাবে বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মৎস্য গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মা ইলিশ ও অন্যান্য মাছের প্রজনন সময়ে নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। আগে ভারতের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও ৩৯ দিন বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরতে পারতো না। সরকার এখন এটা সমন্বয় করার কারণে দেশের জেলেরা আর বঞ্চিত হবে না। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমিয়ে আনার কারণেও তারা উপকৃত হবে।’
এ বিষয়ে গত বছরের ৩০ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘ভারতীয় জেলেদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশিরা, কমছে বিধিনিষেধ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।