Homeঅর্থনীতিমার্কিন বাজারে বিপাকে প্রতিদ্বন্দ্বিরা, বাংলাদেশের অনন্য সুযোগ

মার্কিন বাজারে বিপাকে প্রতিদ্বন্দ্বিরা, বাংলাদেশের অনন্য সুযোগ


সুতি জার্সি ও পুলওভার বিশ্বব্যাপী অন্যতম সর্বাধিক আমদানি হওয়া পোশাক পণ্য। এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার, আরামদায়ক বৈশিষ্ট্য এবং বছরজুড়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে কারণে এগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। হালকা, বায়ু চলাচল উপযোগী এবং প্রায় সব ঋতুর উপযোগী হওয়ায় এই পোশাকটি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে।

যুক্তরাষ্ট্রে সুতি জার্সি ও পুলওভারের বিশেষ চাহিদা আছে। কারণ, এগুলো মৌসুমভিত্তিক ফ্যাশন ট্রেন্ড ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য সমানভাবে উপযোগী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফাইবার টু ফ্যাশন মার্কিন বাজারে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিবর্তন কেমন হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেছে। বিশেষ করে, চীন বাজার হারানোর ফলে বাংলাদেশসহ কোন দেশগুলো লাভবান হতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।

ভিয়েতনাম: উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও প্রতিযোগিতায় দুর্বল

ভিয়েতনাম তুলার জার্সি ও পুলওভারের শীর্ষ রপ্তানিকারক। দেশটির রিভিলড কম্প্যারাটিভ অ্যাডভান্টেজেস বা তুলনামূলক সুবিধার সূচক (আরসিএ—আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যবহৃত একটি সূচক, যা বাণিজ্য প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা উৎপাদন ও রপ্তানিতে একটি দেশের আপেক্ষিক শক্তি পরিমাপ করে।) ৪ দশমিক ৪৮। তবে এর ইউনিট ভ্যালু রিয়ালাইজেশন (ইউভিআর—ইউনিট ভ্যালু রিয়ালাইজেশন বলতে বোঝায় রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের প্রতি ইউনিটের দামের অর্থনৈতিক মূল্য। অর্থাৎ, প্রতি একক রপ্তানি করে কত টাকা পাওয়া গেল, সেটাই ইউনিট ভ্যালু রিয়ালাইজেশন।) মাঝারি পরিসরে থাকায় এটি ব্যাপক ক্রেতাদের কাছে সহজলভ্য। তবে বাংলাদেশ ও চীনের তুলনায় ভিয়েতনামের তুলনামূলক উচ্চ ইউভিআর দেশটির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।

ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো বিশেষ শুল্ক-সুবিধা পায় না। কারণ, সুতির জার্সি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোতে মোস্ট ফেভারড ন্যাশনের বা এমএফএন (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কোনো সদস্য দেশ অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন যে শুল্ক আরোপ করতে পারে, তাকে বোঝায়।) শুল্কের আওতায় পড়ে। চীন ও বাংলাদেশের তুলনায় ভিয়েতনামের ইউভিআর বেশি হওয়ায় এটি মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।

চীন: উচ্চ শুল্কের কারণে হুমকির মুখে

চীন সুতি জার্সি ও পুলওভারের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। দেশটির ইউভিআর প্রতি কেজিতে ১০ দশমিক ৫৪ ডলার, যা সর্বনিম্ন, এবং দেশটির আরসিএ মাত্র ১ দশমিক ০২। কম ইউভিআর চীনের বিশাল উৎপাদন সক্ষমতা ও অর্থনীতির প্রতিফলন, যা দেশটিকে সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য সরবরাহে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফায় চীনের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এর ফলে, ইউভিআর বেড়ে আনুমানিক প্রতি কেজিতে ১১ দশমিক ৫৯ ডলারে দাঁড়াবে। উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় চীনের ঐতিহাসিক কম খরচের সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে এটি মূল্য সচেতন ক্রেতারা খুব একটা পছন্দ নাও করতে পারেন।

দ্বিতীয় দফার শুল্ক বৃদ্ধি ৪ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। এই পর্যায়ে শুল্ক হার ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এর ফলে চীনের ইউভিআর বেড়ে প্রতি কেজিতে ১২ দশমিক ৬৫ ডলার বা তার বেশি হতে পারে। তবে এই উচ্চ শুল্ক সত্ত্বেও চীন তুলনামূলকভাবে কম ইউভিআর ধরে রাখতে পারবে, ফলে এটি এখনো কম দামের বাজারে প্রতিযোগিতায় থাকতে সক্ষম হবে।

কম্বোডিয়া: উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার দেশ

চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে কম্বোডিয়া লাভবান হতে পারে। দেশটির ইউভিআর ভিয়েতনামের সমপর্যায়ের হলেও আরসিএ অনেক বেশি, যা দেশটিকে বৈশ্বিক সুতি জার্সি ও পুলওভার বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। এই উচ্চ আরসিএ কম্বোডিয়াকে বিশেষায়িত ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেয়। চীনের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কম্বোডিয়া উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেবে।

বাংলাদেশ: সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রতিযোগী

চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হতে পারে বাংলাদেশ। দেশটি সুতি জার্সি ও পুলওভার বাজারে সর্বোচ্চ আরসিএ (২৭ দশমিক ৩৬) এবং সর্বনিম্ন ইউভিআর (প্রতি কেজিতে ১৪ দশমিক ৮৬ ডলার) ধারণ করে। এর অর্থ, বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক (তুলনামূলক কম) দামে এই পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে সক্ষম।

মূলত, বাংলাদেশ চীনের প্রধান প্রতিযোগী। তবে চীনের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মার্কিন ক্রেতারা এখন কম খরচে বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছে, যেখানে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল অবকাঠামো, দক্ষ শ্রমশক্তি ও শুল্কমুক্ত বাজারে প্রবেশাধিকার এটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।

ইন্দোনেশিয়া: উচ্চ ইউভিআরের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে

ইন্দোনেশিয়ার আরসিএ ৭ দশমিক ১, যা শক্তিশালী প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নির্দেশ করে। তবে উচ্চ ইউভিআর (চীনের তুলনায় ১ দশমিক ৯ গুণ বেশি) এটিকে মূল্য সচেতন ক্রেতাদের বাজারে পিছিয়ে রাখছে। উচ্চ ইউভিআর ইঙ্গিত দেয় যে, ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন ব্যয় বেশি, যা হয়তো শ্রম খরচ, কাঁচামালের দাম বা কম উৎপাদন স্কেলের কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, এটি বাংলাদেশ ও চীনের মতো কম দামের সরবরাহকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দুর্বল অবস্থানে থাকবে।

তবে, উচ্চ মূল্যমান প্রিমিয়াম বা বিশেষায়িত বাজারের প্রতি ইঙ্গিত করতে পারে বিষয়টি। যেখানে গুণগত মান, টেকসই উৎপাদন বা ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইন্দোনেশিয়া যদি খরচ কমানোর কৌশল গ্রহণ করতে পারে, তবে প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশ মার্কিন সুতার তৈরি জার্সি ও পুলওভার বাজারে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হতে যাচ্ছে। দেশটি সুতি জার্সি ও পুলওভার বাজারে সর্বোচ্চ আরসিএ (২৭ দশমিক ৩৬) এবং সর্বনিম্ন ইউভিআর (প্রতি কেজিতে ১৪ দশমিক ৮৬ ডলার) ধারণ করে, যা দেশটিকে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রাখছে। চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন ক্রেতারা সাশ্রয়ী মূল্যের পণ্য সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকছে, যেখানে বাংলাদেশের বাজার দখলের সম্ভাবনা প্রবল।

অন্যদিকে, ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির পরও চীনের ইউভিআর প্রতি কেজিতে ১২ দশমিক ৬৫ ডলার হওয়ায় এটি মূল্য সচেতন বাজারের জন্য প্রতিযোগিতামূলকই থাকবে। বৃহৎ উৎপাদন সক্ষমতা এবং বিশাল অর্থনীতির কারণে চীন এখনো তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। ফলে, কিছু ক্রেতা বিকল্পের দিকে ঝুঁকলেও, চীন বৈশ্বিক তুলার জার্সি ও পুলওভার বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত