বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের সিনেমা নিয়ে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র উৎসব। সম্প্রতি বলিউড অভিনেতা আমির খানের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে এমন একটি উৎসবের ঘোষণা এসেছে। ‘আমির খান: সিনেমা কা জাদুকর’ শিরোনামের উৎসবটি আয়োজন করছে ভারতের মাল্টিপ্লেক্স চেইন পিভিআর আইনক্স। ১৪ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ভারতজুড়ে পিভিআর আইনক্সের থিয়েটারে দেখা যাবে আমির খান অভিনীত পাঁচটি সিনেমা। এর আগে রাজ কাপুর, অমিতাভ বচ্চনদের সিনেমা নিয়েও হয়েছে উৎসব। আমাদের দেশে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রয়াত সালমান শাহকে নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করা হলেও, এর পরে আর কোনো অভিনয়শিল্পী বা পরিচালককে নিয়ে এমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সালমান শাহকে নিয়ে উৎসব আয়োজন করেছিল ঢুলি কমিউনিকেশন। ২০১৪ সালে বলাকা ও ২০১৯ সালে মধুমিতা সিনেমা হলে হয়েছিল সপ্তাহব্যাপী উৎসব। দর্শকদেরও আগ্রহ ছিল উৎসব দুটি নিয়ে। সালমান শাহ জন্মোৎসবের অভিজ্ঞতা জানিয়ে উৎসবের আহ্বায়ক নিপু বড়ুয়া বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের মানুষের কাছে সালমান শাহ একটি ভালোবাসার নাম। সেই ভালোবাসার জায়গা থেকে আমরা চারজন মিলে উৎসবের আয়োজন করি। ২০১৪ সালে বলাকায় ও ২০১৯ সালে মধুমিতায় হয় উৎসব। দুটি ভেন্যুতেই দর্শকদের ভালো সাড়া পেয়েছিলাম। তবে ভালো অভিজ্ঞতার সঙ্গে তিক্ততাও আছে। সিনেমার প্রিন্ট জোগাড় করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এমন অনেক সিনেমা আছে, যেগুলোর প্রিন্ট কোথায় আছে তা কেউ জানে না। এখন সিনেমা হলগুলো ডিজিটালাইজড। কিন্তু সিনেমার প্রিন্ট ছিল অ্যানালগ। এটি নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’
এরপরে আর কেন এমন উৎসবের আয়োজন করা সম্ভব হলো না, জানতে চাইলে নিপু বড়ুয়া বলেন, ‘একটি উৎসব করতে গেলে অনেক খরচ হয়। প্রয়োজন পড়ে পৃষ্ঠপোষকতার। আমাদের এখানে পৃষ্ঠপোষকতার খুব অভাব। দুটি উৎসবেই সেটা টের পেয়েছি। ইচ্ছা ছিল জাফর ইকবালের সিনেমা নিয়ে উৎসব করার, কিন্তু সহযোগী হিসেবে কাউকে পাওয়া যায়নি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, শিল্পীদের পরিবার। সালমান শাহকে নিয়ে উৎসব করায় আপত্তি তোলে তাঁর পরিবার। সালমান শাহর মা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে নিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। এসব কারণেই ২০১৯ সালের পরে আর কোনো অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে উৎসব আয়োজন সম্ভব হয়নি।’
শিল্পীদের নিয়ে এমন আয়োজনকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর। এমন আয়োজন না হওয়ার পেছনে পেশাদারত্বের অভাবকে দায়ী করলেন তিনি। মিশা সওদাগর বলেন, ‘একজন অভিনয়শিল্পীর সিনেমা নিয়ে উৎসব হওয়া তো শিল্পীর জন্যই বড় পাওয়া, সম্মানের বিষয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই আমাদের দেশের খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে উৎসব হোক। কিন্তু শিল্পী তো নিজ থেকে বলতে পারেন না আমার সিনেমা নিয়ে উৎসবের আয়োজন করেন। শিল্পী সমিতি থেকে আয়োজন করলেও বিষয়টা একই দাঁড়ায়। তাই শিল্পীদের সংশ্লিষ্টতা নেই এমন কোনো সংগঠন থেকে এটা হতে পারে। বেসরকারি কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবেও এমন আয়োজন হতে পারে। তবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যেখানে পেশাদারত্বটাই পুরোপুরি তৈরি হয়নি, সেখানে অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব একটু বাহুল্য বৈকি। আমি মনে করি, শিল্পীদের নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব করলে শিল্পকে সম্মান করা হবে।’
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উপমহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা আছেন, যাঁদের সিনেমা নিয়ে উৎসব আয়োজন করা যায়। কিন্তু কেন হচ্ছে না এটা আমার জানা নেই। পরিচালক সমিতিতে এ নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করেছি। ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছি। প্রথমে নায়করাজ রাজ্জাক ও গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে নিয়ে উৎসব করার পরিকল্পনা আছে। তাঁরা একসঙ্গে অনেক সিনেমায় কাজ করেছেন। দিনব্যাপী আয়োজনে তাঁদের সিনেমা দেখানো হবে, দুই পরিবারের সদস্যরা থাকবেন, সহকর্মীদেরও আমন্ত্রণ করা হবে। সেদিন সবাই তাঁদের নিয়ে কথা বলবেন। সেই কথাগুলো আমরা ধারণ করে রাখতে চাই। এভাবে অন্য নির্মাতাদের নিয়েও নিয়মিত আয়োজন করার ইচ্ছা আছে।’