পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আসন্ন ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করতে বাড়ি ফিরবে লাখ লাখ মানুষ। এতে যানবাহনের চাপ বাড়বে সড়ক-মহাসড়কে। এবার সারা দেশে যানজটের জন্য ১৫৯টি সম্ভাব্য স্পট (স্থান) চিহ্নিত করেছে জননিরাপত্তা বিভাগ। এসব জায়গায় যানজট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই ঈদের আগে এবং পরে এসব স্পট বিশেষ মনিটরিংয়ের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়ক ও রেলপথে যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে গতকাল রোববার বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
সভার কার্যপত্রের নথিতে বলা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সারা দেশে যানজটের জন্য ১৫৯টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৯টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫৪টি, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬টি, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪২টি এবং ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে।
সভায় ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশি যানজটের আশঙ্কা করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দ আছে। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাজার বসে যানজট সৃষ্টি হয়। লালমনিরহাট-বুড়িমারী দুই লেনের সড়কের অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঈদের আগে মেরামত না করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকেরা।
মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখার বিষয়ে আলোচনা উঠলে হাইওয়ে পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়, ‘ঈদের সময় যাতে যাত্রা নির্বিঘ্ন হয়, সে জন্য প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। তবে আমরা দেখেছি, ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ, যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার। আরও কিছু জায়গায় যানজট হতে পারে, সেগুলো আমরা দেখব।’
সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ১৫ রোজার মধ্যে সব রাস্তার সংস্কারকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান বলেন, সড়কের যেসব জায়গায় খানাখন্দ আছে, সেগুলোয় ঈদের আগেই মেরামতকাজ শেষ হয়ে যাবে। ২০ মার্চের মধ্যেই এলেঙ্গা-রংপুর ফোর লেন খুলে দেওয়া হবে।
বাস টার্মিনালে পকেটমার, চুরি, মলম পার্টি বন্ধ করতে ঈদের সময় গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সভায় আলোচনা উঠলে সড়ক উপদেষ্টা বলেন, পদ্মা সেতুতে চলাচলের গতিসীমা আগে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার ছিল। ঈদের সময় যানবাহনগুলো যেন দ্রুত যেতে পারে, সে জন্য গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার করা হবে। মহাসড়কে গতিসীমার কিছু সাইন আছে, সেগুলো দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সভায় ঈদে বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি টার্মিনালে আমাদের লোকজন থাকবে। ভাড়ার অভিযোগ থাকলে তাদের কাছে জানাতে হবে।’
এ ছাড়া সভায় ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল বন্ধের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ঈদের আগে সিএনজি স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার বিষয়েও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এদিকে ঈদের আগে পোশাক কারখানার ছুটির বিষয়ে আলোচনা উঠলে বিজিএমইএর তরফ থেকে জানানো হয়, গার্মেন্টসের কর্মীরা ঈদের আগেই বেতন-বোনাস পেয়ে যাবেন। ফলে কোনো সমস্যা হবে না। একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার জন্য মালিকদের বলা হয়েছে।
সভায় বিআরটিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অনুপম সাহা বলেন, ঈদের সময় বিআরটিসির ১ হাজার ২৪৫টি গাড়ি চলাচল করবে। ২০ মার্চ থেকে এসব বাসের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘সড়কের সব বিষয় মনিটরিং করার জন্য আমাদের একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। একই সঙ্গে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা টার্মিনালসহ সড়কে থাকবে, যেকোনো অনিয়ম হলে তারা ব্যবস্থা নেবে।’
সভায় ট্রেনের টিকিটের বিষয়ে রেল উপদেষ্টা বলেন, ঈদের সময় ১০টি বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে ১৪ মার্চ। ট্রেনের সব অগ্রিম টিকিট অনলাইনে দেওয়া হবে। পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টা থেকে অনলাইনে দেওয়া হবে এবং পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বেলা ২টা থেকে দেওয়া হবে। প্রতিটি ট্রেনের ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হবে ট্রেনের যাত্রার আগে।
সভায় সড়ক, সেতু এবং রেল মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশের জেলা প্রশাসক ও এসপিরা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। পরিবহনশ্রমিক সংগঠনসহ বেসরকারি বিভিন্ন অংশীদারও ছিলেন এতে।