Homeদেশের গণমাধ্যমেমৃত্যুর সাত মাস পর বাবা হলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সেলিম

মৃত্যুর সাত মাস পর বাবা হলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ সেলিম


অপারেশন থিয়েটার থেকেই বের করতেই নবজাতক দু’চোখে টলটলিয়ে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। নিজ হাত মুখে দিচ্ছে। দাদি ছোট্ট কাঁথা নিয়ে নাতনিকে কোলে নিলেন। তখনো মাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়নি। এ সময় নবজাতক কান্না শুরু করল।

স্বজনদের মনে প্রশ্ন, জন্মের পর এদিক-ওদিক তাকিয়ে শিশুটি কি বাবাকেই খুঁজছিল? নবজাতকের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়-স্বজন সবাই ডুকরে কেঁদে উঠলেন।

শিশুটি জন্মের পরে আনন্দের পরিবর্তে বাবা সেলিম তালুকদারের অনুপস্থিতি স্মরণ করে শোক, আহাজারি ও বিলাপ করতে থাকেন স্বজনেরা। এ সময় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমী আক্তার শনিবার (৮ মার্চ) রাত ৮টার দিকে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ঝালকাঠি শহরের একটি ক্লিনিকে শিশুটি দুনিয়ার আলো দেখতে পায়।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই গুলিতে নিহত হন। এর তিন দিন পরই ছিল (৪ আগস্ট) তার প্রথম বিবাহবার্ষিকী।

৮ আগস্ট পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সুমীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পেলেও শিশুটি বাবা সেলিম তালুকদারকে হারিয়েছে জন্মের সাত মাস আগেই।

সেলিম তালুকদার (২৮) একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সেলিম নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজো।

সেলিমের স্ত্রী সুমী জানান, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।

সুমী বলেন, ‘‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া, আমার সন্তানকে যেন কারো কাছে হাত পাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচব শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচব। সন্তানকে তার পরিচয় দেব।’’

ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘‘এখন যদি সেলিম বেঁচে থাকত, তাহলে প্রথম সন্তান দেখে কত আনন্দ পেত।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলের চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে এসব টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আমরা চাই, আমার ছেলেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হোক।’’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত