পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিএসইসি কার্যালয়ের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘আমাদের দাবি অনুযায়ী বুধবারের মধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ না করায় বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছি। আমাদের এ কর্মবিরতি বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনেরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে।’
এ দিকে বিএসইসির অভ্যন্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সৃষ্ট ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পুঁজিবাজারের স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে এই ঘটনার দ্রুত সমাধান চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, যেখানে দীর্ঘ বছর ধরে দেশ বিদেশের নানান নেতিবাচক ঘটনা ও সিদ্ধান্তের ফলে দেশের পুঁজিবাজার ক্রান্তিকাল পার করছে। যেখানে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে, বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের মাঝে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার ঘটনা বাজারের জন্য মোটেও সুখকর নয়। এই ঘটনা বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে। কমিশনের অভ্যন্তরে চলমান ঘটনার দ্রুত সমাধান না হলে বাজারে বিদ্যমান আস্থার সংকট আরও প্রকট হতে পারে এবং দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে সাইফুল ইসলাম বলেন, কমিশনের অভ্যন্তরে সৃষ্ট এই ঘটনা বাজারে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাজারে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করবে এবং সামগ্রিকভাবে বাজারকে অস্থিতিশীল করে দেবে। তাই বাজারের জন্য ক্ষতিকর কমিশনের অভ্যন্তরে চলমান বিশৃঙ্খলা দ্রুত বন্ধ হওয়া দরকার। বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে কমিশনে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ দাবি করছি।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল কর্মকাণ্ড ও নিরলস প্রচেষ্টার সহযোগী হতে আমরা বাজার সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য, বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেনাবাহিনী পাহারায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ কমিশনাররা বিএসইসি ত্যাগ করেন।
ওই দিন সকাল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিএসইসি ভবনের ৪ তলায় জড়ো হয়ে পুরো বিএসইসি কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। বিএসইসির প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশ গিয়েও প্রবেশ করতে পারেনি। পরে দুপুর ২টার দিকে ছয়টি গাড়িতে সেনাবাহিনী আসে। তাদেরও ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জোরপূর্বক প্রবেশ করেন। পরে পদত্যাগ ছাড়াই সেনাবাহিনীর পাহারায় বিকেল ৩টা ৩৬ মিনিটে বিএসইসি ত্যাগ করেন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা।
এর আগে বুধবার জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেয় বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। বিএসইসির বোর্ড রুমে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাখ্যা চায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানসহ কমিশনাররা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বিভিন্ন তদন্তকাজের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা হুমকির মুখে পড়লে কোনো ধরনের সহায়তা করেন না। এ জন্যই তাঁরা বর্তমান কমিশনের সদস্যদের পদত্যাগ চান।
মূলত এ ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারির পর থেকে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ পুরো কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নিয়েই গত বছরের ২২ আগস্ট সাইফুর রহমানকে ইস্যুয়ার কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে আরঅ্যান্ডডি বিভাগের দায়িত্ব দেয়। তখনই মূলত তাঁকে এক প্রকার ওএসডি করা হয়। তবে, ৯ সেপ্টেম্বর সেই দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে সাইফুর রহমান নিয়মিত অফিসে এসেছেন, কিন্তু কোনো কাজ করতে পারেননি।