বাঘ, সিংহ, হাতি, সাম্বার হরিণ, জলহস্তী, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, জিরাফ, জেব্রা, ভালুক, নীলগাই, গয়াল, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রাণী অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিরাপদে এই দৃশ্য দেখা যায় আমাদের দেশে। আর দেখতে হলে এক দিনের জন্য ঘুরে আসা যাবে গাজীপুর সাফারি পার্ক। সব বয়সী মানুষের জন্য সাফারি পার্কে রয়েছে অসংখ্য বিনোদন স্পট।
থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার বালি সাফারি পার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১১ সালে গাজীপুর সাফারি পার্কের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হাজারো দেশি-বিদেশি প্রাণীর এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ওঠে এই পার্ক। রংবেরঙের পাখি রয়েছে এখানে। জিরাফ ফিডিং স্পট, পেলিকেন আইল্যান্ড, ক্রাউন ফিজেন্ট, ধনেশ ও প্যারট অ্যাভিয়ারি, দেশি-বিদেশি পাখিশালা, কুমির পার্ক, অর্কিড হাউস, প্রজাপতি ও শকুন কর্নার, এগ ওয়ার্ল্ড, কচ্ছপ-কাছিম ব্রিডিং সেন্টার, লামচিতা হাউস, হাতিশালা, ময়ূরবেষ্টনী, ম্যাকাউ ওপেন ল্যান্ড, সর্প পার্ক, ফেন্সি কার্প গার্ডেন, জলধারাসহ অসংখ্য স্পট আছে এখানে। পার্কের মূল আকর্ষণ কোর সাফারি।
এখানে বিশাল এলাকায় বিভিন্ন ধরনের রাইড নিয়ে আছে শিশুপার্ক। সাফারি পার্কে প্রবেশের পর কিছু দূর হাঁটলেই পাওয়া যাবে কোর সাফারি। এর মূল ফটকের সামনে থেকে টিকিট সংগ্রহ করে উঠতে হবে পার্কের নিজস্ব বাসে। বাস চলবে শাল-গজারি বনের ভেতর দিয়ে। যেতে যেতে দেখা যাবে, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো জিরাফ, জেব্রা, হরিণ কিংবা বিপন্ন নীলগাই, গয়ালসহ অনেক তৃণভোজী প্রাণী। এরপর দেখা যাবে ভালুকবেষ্টনী। দরজা খুলে সেখানে বাস প্রবেশ করলে দেখা যাবে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো কিংবা খুনসুটিতে মেতে থাকা ভালুকদের।
ভালুকবেষ্টনী পার হয়ে সামনে রয়েছে সিংহ। দেখা যাবে বিশাল মাঠে ঘুরেফিরে বেড়ানো সিংহদের। এরপর বাঘবেষ্টনী। এখানে বিভিন্ন ধরনের বাঘ দেখা যাবে। কখনো কখনো সেগুলো বাস ঘেঁষে হাঁটাচলা করবে। সাফারি পার্কে হিংস্র প্রাণীগুলো রাখা হয়েছে বেষ্টনীর ভেতর। এসব বেষ্টনীতে দর্শনার্থীরা থাকেন বাসে বন্দী আর পশুরা থাকে মুক্ত।
কোর সাফারি শেষ করে হেঁটে কিছুটা সামনে গেলে পাওয়া যাবে সাফারি কিংডম। টিকিট কেটে এখানে ঢুকতে হবে। এটি মূলত পাখিশালা। সাফারি কিংডমে রয়েছে ২৮টি বিদেশি ম্যাকাউ, শতাধিক টিয়া পাখি, কাকাতুয়াসহ প্রচুর বিদেশি পাখি। এখানে প্রথমেই চোখে পড়বে বাহারি রঙের ম্যাকাউ। পাখিদের কলকাকলিতে চারপাশ মুখর থাকে সব সময়। এর পাশে রয়েছে রঙিন মাছের অ্যাকুয়ারিয়াম ও প্রজাপতি কর্নার। এক রাস্তা ধরে একটু সামনে গেলে পাওয়া যাবে জলহস্তীবেষ্টনী। বিশাল একটি পুকুরের পানিতে খেলা করছে কতগুলো জলহস্তী। সঙ্গে রয়েছে তাদের ছানাগুলো। সীমানাপ্রাচীরের পাশে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে জলহস্তী।
এরপর একটু সামনে গেলে কংক্রিটের তৈরি বিশাল কুমিরের পেট দিয়ে প্রবেশ করলে শিশুপার্ক। পাশেই রয়েছে ময়ূরবেষ্টনী। সেখানে রয়েছে শত শত রংবেরঙের ময়ূর। এর পাশে রয়েছে ধনেশবেষ্টনী। এখানে রয়েছে প্যালিকন, রাজধনেশ, কাকধনেশ। এর পরেই পাওয়া যাবে শকুন ও কুমিরবেষ্টনী। কুমিরবেষ্টনীতে রয়েছে মিঠাপানির কুমিরও। অজগরবেষ্টনী, ঘড়িয়াল, প্যাটাগুনিয়া মারা, লেমুর হনুমান, উটপাখি, ইমুপাখি, মদনটাক, জাগুয়ার, এমন বিভিন্ন বেষ্টনীতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা প্রাণী। হাতিশালায় শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। বিনোদনের জন্য রয়েছে লম্বা ঝুলন্ত সেতু, নেচার হিস্ট্রির মিউজিয়াম।
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অল্প টাকায় এক দিনের জন্য সাফারি পার্ক হতে পারে চিত্তবিনোদনের উপযুক্ত জায়গা। এখানে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন বন বিভাগ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
প্রতি মঙ্গলবার গাজীপুর সাফারি পার্ক বন্ধ থাকে। বাকি দিনগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য সাফারি পার্ক উন্মুক্ত থাকে।
যেভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো জেলা শহর থেকে গাজীপুরে যাওয়া যায়। গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর অথবা বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে যাওয়া যাবে সাফারি পার্কে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ কিংবা গাজীপুরগামী বাসে ভবানীপুর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে ২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়া যায় সাফারি পার্কে।
টিকিট
মূল ফটকে প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা। শিশুপার্কে প্রবেশে কোনো টাকা লাগে না। সাফারিতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ১৫০ টাকার টিকিট কিনতে হবে। তবে শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য টিকিটের দাম ৫০ টাকা।