Homeঅর্থনীতিনগদ লেনদেনের শর্ত বাতিল দাবি

নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিল দাবি


কোম্পানির করহারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিলের দাবি তুলেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। চেম্বারের অভিযোগ, সরকারের নগদ লেনদেনের সীমা নির্ধারণের ফলে ব্যবসায়ীরা করপোরেট কর হ্রাসের (ট্যাক্স কাট) সুবিধা নিতে পারছেন না। তাঁদের মতে, শর্তটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং কর সুবিধা গ্রহণে গুরুতর বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমসিসিআই দাবি করেছে, ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে কর কমানোর সুযোগ পান, সে জন্য কোম্পানির করহারে নগদ লেনদেনের শর্তটি দ্রুত বাতিল করা উচিত।

অপর দিকে করপোরেট করহার গত ৫ বছরে প্রায় ১০ শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশে আনা হলেও বাস্তবে কার্যকর করহার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বিদেশি কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। সংগঠনটি আরও বলেছে, এই করছাড় পাওয়া সম্ভব হয় না। কারণ, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা গ্রহণ করা কঠিন।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনায় শীর্ষ ব্যবসায় সংগঠন দুটি গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরে এবং কোম্পানির করহারের ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিলের দাবি জানায়।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান রাজস্ব নীতিমালায় বিদ্যমান বিভিন্ন অসংগতি দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন, যাতে দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।

এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে করপোরেট করহার কমানো হলেও ২০২৪ সালের অর্থ আইনে নগদ লেনদেনের শর্ত যোগ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বড় ও মাঝারি কোম্পানিগুলোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের উচ্চ করহার ব্যবসায়িক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং কোম্পানিগুলোর জন্য তা আর্থিক বোঝা হয়ে উঠছে।

এমসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, করপোরেট করহার কমানোর পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর ও টার্নওভার কর নীতির সংস্কারও জরুরি। তিনি দাবি করেছেন, কর সংগ্রহের নীতি আয়ভিত্তিক হওয়া উচিত, অর্থাৎ কোম্পানির প্রকৃত আয়ের ওপর কর নির্ধারণ করা উচিত, টার্নওভারের ওপর নয়। এতে ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রকৃত আয় অনুযায়ী কর দেবেন এবং এটি ব্যবসায়িক পরিবেশে আরও সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতা আনবে।

এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান আরও অভিযোগ করে বলেন, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী ২৬৪ ধারা অনুসারে ৪৫টি ক্ষেত্রে পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক করা ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাঁর মতে, শর্তটি ব্যবসার সক্ষমতা হ্রাস করছে এবং সহজীকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছে। পিএসআর সংগ্রহের প্রক্রিয়া হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা জটিল করছে এবং কর-সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহকে অযৌক্তিক বানাচ্ছে। তা ছাড়া রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা থাকা সত্ত্বেও হালনাগাদকৃত পিএসআর দাখিলের বিধান বাস্তবসম্মত নয়।

ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ট্যাক্সেশন বিষয়ে আলোচনায় গুরুত্ব পাওয়া উচিত কীভাবে আরও বেশি প্রত্যক্ষ কর (ডিরেক্ট ট্যাক্স) আদায় করা যায়। পাশাপাশি কর ব্যবস্থাটি আরও সমন্বিত ও ব্যাপকভাবে সাজানো দরকার, যাতে তা কার্যকর ও সুষম হয়। এ সময় ফিকির পক্ষে কনসালট্যান্ট ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, গত ৫ বছরে করপোরেট করহার কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে, বাস্তবে কার্যকর করহার অনেক সময় ৭০-৮০ শতাংশ হয়ে যায়। তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা গ্রহণের অসুবিধার কারণে এই করছাড় পাওয়া কঠিন, বিশেষ করে যেহেতু বাংলাদেশের গ্রাহকেরা কার্ড ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নন এবং নগদে লেনদেন ছাড়া বিক্রি করা সম্ভব নয়। তিনি সুপারিশ করেন, বিক্রির একটি অংশে শর্তগুলো ধাপে ধাপে শিথিল করা হলে কোম্পানিগুলোর জন্য এটি সুবিধাজনক হবে।

স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য আড়াই শতাংশ করছাড় পেতে হলে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। তবে অনেক কোম্পানি আগে আইপিও করেছে এবং তখন তারা ৫-১০ শতাংশ শেয়ার ছেড়েছে, তাদের জন্য এই শর্ত পূরণ করা কঠিন। স্নেহাশীষ সুপারিশ করেন, যদি আইনে একটি প্রভিশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে শেয়ার ছাড়তে চাওয়া কোম্পানিগুলোর জন্য বিষয়টি সহজ হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে বলেন, দেশের রাজস্ব আদায় এখনো প্রয়োজনীয় মাত্রায় পৌঁছায়নি এবং তাঁদের পরামর্শ অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। তিনি আশ্বাস দেন যে বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতিফলন ও সদিচ্ছা দেখা যাবে, তবে কিছু সমস্যার সমাধান এক দিনে সম্ভব নয়। ভ্যাট আদায়, চালান ইস্যু, হিসাবরক্ষণ ও রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি ‘ন্যাশনাল সিস্টেম’ চালু করার পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা একক সিস্টেমের মাধ্যমে ভ্যাটের সব কাজ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, যদি ব্যবসায়ীরা একমত হন, তবে ভ্যাট কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে, তবে তা একক হার হিসেবে হবে এবং শৃঙ্খলার মধ্যে থাকবে, যাতে বিভিন্ন হারের প্রয়োগ বন্ধ হয়।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত