Homeদেশের গণমাধ্যমেদেশে অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি, আগের মতোই

দেশে অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি, আগের মতোই


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায় সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির নিয়েও একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির। সোমবার (৩ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে সংবাদ মাধ্যমটি।

সাক্ষাৎকারে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই হয়েছে। প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুইদিন আগে তারা এদেরকে গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতে করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়মশৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকবো।

ধানমন্ডি ৩২সহ সারাদেশে অনেক ভবনে ভাঙচুর, মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ সময় নিচ্ছে। তারা প্রস্তুত হয়ে নিয়েও, তাদের মানসিকতা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন গঠন হলো, আমার কোনও চিন্তা ছিল না যে আমি হঠাৎ করে একটা সরকারের প্রধান হবো। সেই দেশ, এমন দেশ, যেখানে সব তছনছ হয়ে গেছে। কোনও জিনিস আর ঠিকমতো কাজ করছে না। যা কিছু আছে ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে। একটা পলাতক দল (আওয়ামী লীগ) দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। এখন তারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে।

কাজেই আমার প্রথম চেষ্টা ছিল সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে আসল চেহারাটা বের করে আনা। মানুষের দৈনন্দিন জীবন সহজ করে আনা। তারপর আস্তে আস্তে ভবিষ্যতটা কী হবে, সেটার জন্য চিন্তা করা।

প্রথম চিন্তা এলো যে একটা সংস্কার দরকার আমাদের। কারণ যে কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে, ফ্যাসিবাদী সরকার চলতে পেরেছে। ১৬ বছর ধরে চলতে পেরেছে, আমরা কিছুই করতে পারি নাই। তিন-তিনটা নির্বাচন হয়ে গেলো, ভোটারের কোনো দেখা নাই। এই যে অসংখ্য রকমের দুর্নীতি এবং ব্যর্থতা, মিসরুল– সেখান থেকে দেশটাকে আমরা কীভাবে টেনে বের করে আনবো। টেনে বের করে আনতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো করতে হবে। তবে এখনও সংস্কার শুরু করেননি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

পরিবর্তন সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, যে ধ্বংসাবশেষ থেকে এসেছিলাম, তার নতুন চেহারা আসছে। ভেসে উঠছে যে, আমরা অর্থনীতি সহজ করেছি। দেশবিদেশের আস্থা অর্জন করেছি। সারা দুনিয়ায় আমরা আস্থা স্থাপন করতে পেরেছি। অবিশ্বাস্য রকমের সহায়তা দিয়েছে তারা।

বিদেশের আস্থা আদায় করতে পারলেও দেশের মানুষের আস্থা কি পেয়েছেন? এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, দেশের মানুষের আস্থা আমাদের উপর আছে। বিপুল পরিমাণে আছে। কাজেই সেটা হলো বড় প্রমাণ। আমরা কী করছি না করছি- এগুলো খুচরো বিষয় আছে। আমাদের খুচরো বিষয় এটাতে ভালো, ওটাতে মন্দ- কিছু ভালো, কিছু মন্দ, হতে থাকবে। এটা একটা অপরিচিত জগৎ, আমরা এসেছি। আমরা কোনও এক্সপার্ট এখানে এসে বসি নাই। আমরা এসেছি যার যার জগৎ থেকে এসেছি, নিজের মতো করে চেষ্টা করছি কীভাবে করতে পারি। তারমধ্যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। কিছু ভালো করেছে, কিছু ভালো করতে পারেনি। এটা হতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তখন আপনাদের অন্তর্বর্তী সরকারের যে সম্পর্কটা ছিল, এখনও কি সেটা আছে? নাকি এখন সেই অবস্থা আর নেই? প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কেউ আমাকে অসমর্থন করছে, এরকম কোনো খবরতো আমি পাই নাই এখনও। সবাই সমর্থন করছে, সবাই চাচ্ছে যে সুন্দরভাবে দেশ চলুক, তাদের সবার মধ্যে ঐক্য আছে। রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে অনেক তফাত আছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরেছে। এরকম কোনও ঘটনা ঘটে নাই।

ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। সে বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে সরকার তাদের সহায়তা করছে। সরকার কি সহায়তা করছে তাদেরকে বা করেছে? এমন প্রশ্নে জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, যে রাজনীতি করতে চায়, সে নিজেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছে। তিনজন ছাত্র প্রতিনিধি ছিল সরকারের ভেতরে। যিনি রাজনীতি করতে মন স্থির করেছেন, তিনি ইস্তফা দিয়ে সরকার থেকে চলে গেছেন। উনি প্রাইভেট সিটিজেনশিপে রাজনীতি করবেন,কার বাধা দেওয়ার কী আছে?

সম্প্রতি সেনাপ্রধান একটি বক্তব্য দিয়েছেন। তার একটি বক্তব্য ছিল যে, সবাই একসাথে কাজ করতে না পারলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে বা বিপন্ন হতে পারে। আপনি কি এই বক্তব্যের সাথে একমত? এ প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এটা ওনার বক্তব্য উনি বলবেন। আমার ওনাকে এনডোর্স করা না করারতো বিষয় না।

গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি দেখা গেছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সম্পর্কের কোনও অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারবো না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। অপপ্রচারের সূত্র কারা সেটা অন্যরা বিচার করবে। কিন্তু এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা গেছে, বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলছেন। এটা নিয়ে আপনার অবস্থানটা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওই যে ঐকমত্য। আমরা বরাবরই ফিরে যাচ্ছি ঐকমত্যে। সবাই মিলে যা ঠিক করবে আমরা তাই করবো।

আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস আরও বলেন, আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। এ দেশকেই বড় করতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিত, তার বিচার হতে হবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত