বরিশালের উজিরপুর উপজেলার উত্তর বড়াকোঠা এলাকায় সেতু নির্মাণের কাজ করতে ঠিকাদার বিএনপির নেতা রফিকুজ্জামান লিটনের কাছে ছাত্রদল ও কৃষক দল নেতা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না দেওয়ায় কাজের সাইডে গিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। এতে ছয় শ্রমিক আহত হন।
একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারের পার্টনার বরিশাল দক্ষিণ জেলা যুবদেলর যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুম মল্লিকের ধামুড়ার বাসায় হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রদল, কৃষক দল নেতা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ঠিকাদার উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুজ্জামান লিটন ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনির সরদার, উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব স্বপন মল্লিক। তারা মামলার আসামিও।
ঠিকাদার রফিকুজ্জামান লিটন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছর সেতুর কাজটি আমি এবং আমার পার্টনার এক ঠিকাদারের কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। এরপর নির্ধারিত স্থানে নির্মাণকাজ শুরু করি। ৫ আগস্টের আগে কোনও সমস্যা ছিল না। কিন্তু এরপরই উপজেলা ছাত্রদল নেতা মনির এবং কৃষক দল নেতা স্বপন ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে কোনোভাবেই কাজ করতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে এবং বরিশাল থেকেও তাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলিয়ে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করি। কিন্তু চাঁদা না দিলে কোনোভাবেই তারা কাজ করতে দেবে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়ে দেন। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকেও জানানো হয়।সর্বশেষ চাঁদা না দেওয়ায় ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্মাণ কাজস্থলে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালান তারা। সেখানে থাকা অফিস, শ্রমিকদের থাকা এবং খাবারের স্থানসহ যা সামনে পেয়েছে, সব ভেঙে ফেলেছেন। এমনকি ছয় জন শ্রমিককে মারধর করে আহত করেছেন ছাত্রদল ও কৃষক দল নেতাসহ তাদের অনুসারীরা। ওই দিন রাতেই আমার ব্যবসায়িক পার্টনার যুবদল নেতা মাসুমের বাড়িতে গিয়েও ভাঙচুর চালান। এ সময় ওই বাড়িতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যান। মসজিদের মাইক থেকে ডাকাতের ঘোষণা দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।
লিটন আরও বলেন, এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছি। তবে মামলার কোনও আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষকদলের সদস্যসচিব স্বপন মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ছাত্রদল নেতা কী করেছে, তা জানি না। তবে সেতুটি নির্মাণের কাজে আমার বাধা দেওয়ার কারণ ছিল, যে স্থান থেকে সেতু শুরুর কথা ছিল, সেখান থেকে শুরু করা হয়নি। একজন কৃষকের জমির ওপর থেকে নির্মাণের কাজ শুরু করায় আমি বাধা দিই। এর জের ধরে আমাকে চাঁদাবাজ ও হামলাকারী বানিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুজ্জামান লিটন বলেন, লিটনের কাছে চাঁদা দাবি করিনি। এমনকি নির্মাণ সাইড ও যুবদল নেতার বাসায় হামলায় আমি জড়িত নই। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে লিটন ও মাসুম এসব ঘটনা সাজিয়েছেন।
উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) একটি প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল ওই সেতুটি নির্মাণে।