Homeদেশের গণমাধ্যমেসুস্থ ছবির ডাকহরকরা অঞ্জন

সুস্থ ছবির ডাকহরকরা অঞ্জন


যখন অঞ্জনের (জাহিদুর রহিম অঞ্জন) মৃত্যুসংবাদ পেলাম, আমার নিজস্ব কষ্টের চেয়ে ‘রানার’ কবিতার দুটো লাইন বেশি মনে পড়ছিল-

‘এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।’

এদেশে সুস্থ-চিন্তানির্ভর চলচ্চিত্রের সে একজন ডাকহরকরা। নিজের ভাগ‍্য হয়তো বদলাতে পারেনি কিন্তু চলচ্চিত্রের যে অমানিশা, সেখানে কিছু চকমকি পাথর সে এনেছিল। নানা কারণে মশাল জ্বালানো হয়ে ওঠেনি। হয় না এদেশে। কতো প্রতিভা, কতো প্রতিজ্ঞা অনাদরে অবহেলায় ঝরে যেতে দেখলাম। অঞ্জনটাও তার ব্যতিক্রম হতে পারলো না। ‘অমলকান্তি’রা শেষ অব্দি রোদ হয়ে উঠতে পারে না। খবর হতে পারে না। ছাপাখানার অন্ধকারেই থাকতে হয় তাদের।

অঞ্জনের সাথে আমার প্রথম পরিচয় আশির শেষের দিকে বিশ্ব সাহিত‍্য কেন্দ্রে। প্রায় সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে আসতো। আমরাও যেতাম বাঙালির সেই সৎকর্মে। আমরা পরস্পরকে মামা বলে ডাকতাম। অঞ্জনের চোখে মুখে ছড়িয়ে থাকতো এক অতৃপ্ত বাসনার রোদ। পুনে থেকে চলচ্চিত্রের ওপর পড়াশোনা শেষে সবে ফিরেছে দেশে। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের ভাগীদার আজও আমি।

আমাকে বলতো ব্যর্থ কবি। আমি বলতাম কবিরা ব্যর্থ হলে চলচ্চিত্রকার হয়। যেমন হয়েছেন সত্যজিৎ রায়। প্রচণ্ড হাসতো অঞ্জন। এরপর আমাদের গন্তব্যের দ্বৈততা আমাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন পথের যাত্রী করেছে। তবু অন্তরলীন এক সম্পর্ক বেদনার মতো বাজতো আমাদের ভেতর। নিত‍্য খবর হয়তো কেউই কারও রাখতাম না। কিন্তু মানবিক সামাজিক কর্মকাণ্ডে অঞ্জনের খবর পেতাম। আজিজ মার্কেট নিয়মিত শর্টফিল্ম দেখার জন্য মিনি সিনেমা হল বানানো, হাজারো ছাত্রকে চলচ্চিত্র নির্মাণবিষয়ক ক্লাস এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া নিয়ে সে ব‍্যস্ত থাকতো জানতাম। 

এসব নিয়েই হয়তো নিজের জীবন নিয়ে এক অদৃশ‍্য ছবি সে তৈরি করে চলেছিল। পিটার জ্যাকসন যেমন বলেছেন, ‘দ্য মোস্ট অনেস্ট ফর্ম অব ফিল্মমেকিং ইজ টু মেইক আ ফিল্ম ফর ইয়োরসেলফ।’ 

সেই ছবি হয়তো আমরা রূপালি পর্দায় দেখবো না। চোখ বন্ধ করলে মনের পর্দায় হয়তো দেখবো।

লেখক: কবি





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত