দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে বড় পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ ছোট পরিবর্তনের জন্য জীবন দেয়নি, রাজনৈতিক দলগুলো না চাইলে বড় পরিবর্তন আসবে না।
আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ছোট ছোট পরিবর্তনের জন্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দেয়নি। মানুষ বড় পরিবর্তন চেয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা না থাকলে বড় পরিবর্তন সম্ভব হবে না।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সবাই সংস্কারের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবায়নের সময় এলে দলীয় স্বার্থটা বড় হয়ে ওঠে। কিছু সংস্কার আছে, যেসব রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা ভাগাভাগি-সংক্রান্ত, তারা সেসব করতে চায় না। যেসব জনকল্যাণমুখী, সেসব নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের ভোটে নির্বাচিত হয়। তাদের সদিচ্ছার অভাব মানে আমাদের সদিচ্ছার অভাব। আমরা কখনো দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। জুলাই-আগস্টে কিছুটা সময়ের জন্য পেরেছি। আবার তা হারিয়ে গেছে।’
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা কেবল সংবিধানের সমস্যার কথা বলেন। সমস্যা মূলত আমাদের অন্তরে। আমাদের সংবিধান মানার মানসিকতা নেই। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে থেকে সংস্কারের কথা বলে আসছি। আজকে আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলছি, তা তখনো উল্লেখ করা হয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা তখনো বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু এসব সংস্কার কেন বাস্তবায়িত হয়নি, তার উত্তর খোঁজার সদিচ্ছা আমাদের নেই। সরকার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে ফিরে এলে এ বিষয়ে আমি গবেষণা করব।’
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের বিদ্যমান আইন খারাপ না। সংস্কার করে আরও ভালো করা যায়। কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা যায়। সংস্কার নিয়ে মাঝেমধ্যে আশাবাদী, আবার মাঝেমধ্যে হতাশ হই। নিজেদের অপরাধী লাগে। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতিনিধি হওয়ার আদৌ যোগ্য কি না, প্রশ্ন জাগে।’
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা কিছু ছোট সংস্কার করেছি। এগুলোর প্রভাব কম না। যেমন পাসপোর্ট করার সময় পুলিশ ভ্যারিফিকেশন বাদ দিয়েছি। মামলাসংক্রান্ত ভোগান্তি দূর করার জন্য কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণ, সংসদ সদস্যদের আইন সংস্কার ইত্যাদি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হলে যেকোনো আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।’