ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিন সকালে বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে এ ডাকাতি ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো– মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)। তাদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানায় একটি এবং ঢাকার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন নির্যাতনের ঘটনায় সাভারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি এবং ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
‘ঘটনাটি বিভিন্ন জেলাব্যাপী বিস্তৃত থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তারপরও আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাসে নারী যাত্রীদের ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
এদিকে, মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের একটি বাস (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে নাটোরের বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিলেন। বাসটি রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে এবং সেখান থেকে আরও ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী নিয়ে পুনরায় রওনা করে। গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে পৌঁছালে চা-বিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বিরতির সময় আরও তিন থেকে চার জন যাত্রী নিয়ে রওনা করে বাসটি। বাসটি ওইদিন রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫-৬ মিনিট পর হঠাৎ ৮ থেকে ৯ জন যাত্রীবেশী ডাকাত দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে।
এ সময় তিন জন ডাকাত চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে টানাহেচড়া করে কিলঘুষি মেরে উঠিয়ে নিয়ে পেছনে উল্টা করে রাখে। ডাকাতদের একজন চালকের আসনে বসে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাসটি চালিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া এলাকার ফুটওভার ব্রিজের কাছে পৌঁছে ডাকাত দলের সদস্যরা লুট শুরু করে।
এ সময় যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রুপাসহ অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। পরে তারা বাসটি নিয়ে দেলদুয়ার উডজেলার নাটিয়াপাড়ায় গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। এভাবেই প্রায় তিন ঘণ্টা যাত্রীদের মালামাল লুণ্ঠন ও নারীদের যৌন নির্যাতনের পর আশুলিয়ার নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে গাড়িতে থাকা যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। টহল পুলিশ মির্জাপুর থানায় বিষয়টি অবহিত করার পরামর্শ দেয়। যাত্রীরা মির্জাপুর থানায় সেবা না পেয়ে তারা নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে জানান। বিষয়টি ওই এলাকায় সংগঠিত না হওয়ায় পুলিশ চালক, বাসের সুপারভাইজার ও সহকারীকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠায়। পরে তারা ওইদিনই জামিনে মুক্তি পান।