২১ মানেই অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার প্রতিজ্ঞা। আজ মহান ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতীয় আত্মপরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার দাবিকে উচ্চে তুলে ধরার ঐতিহাসিক মাইলফলক দিবস আজ। মায়ের ভাষার জন্য রক্ত ও প্রাণদানের ইতিহাস আজ ৭৩ বছর পুর্ন করেও যেন জ্বলজ্বল করছে। বিশ্বের বুকে এই অনন্য ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। পলাশ-শিমুল ফোটার দিনে তাইতো আজ সাড়া দেশ গেয়ে উঠছে ভাষাশহীদদের স্মরণে লেখা গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?
১৯৫২ সালের এই দিনে ১৪৪ ধারা ভেঙে বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনে নেমে মাতৃভাষার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে ঢাকার রাজপথে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও কয়েকজন। এবার নতুন এক আবহে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে আজ তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা হচ্ছে। তাদের সাহসিকতা ও বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ওই দিন মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল বাঙালি জাতি। গোটা বিশ্বে এটা এক নজিরবিহীন ঘটনা।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক পৃথকভাবে শহিদ মিনারে পুশপ্সতবক অর্পন করেছেন। এছাড়া ২০২৪ এর গণআন্দোলনে আহত এবং সমন্বয়কদেরও শহিদ মিনারে ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান জানাতে দেখা গিয়েছে। ঢাকার সব অলিগলি রাজপথ থেকে খালি পায়ে ফুল হাতে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ ছুটছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ঐতিহাসিকভাবেই এ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে জাতীয় স্বাতন্ত্র্যচেতনায় স্ফুরণ ঘটে, পরবর্তী যাবতীয় আন্দোলন, সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে তার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা রয়েছে। সংক্ষেপে বলা যায়, মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। ঘটেছে জাতীয় প্রতিষ্ঠা।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। প্রতি বছরের মতো এবারো একুশে ফেব্রুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রঙ ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে আজ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, প্রণয়ন করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ।একমাত্র পলাশী ক্রসিং দিয়েই প্রবেশ করা যাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ফুল দেয়া শেষে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি, চানখারপুল এবং হাইকোর্টের দিক দিয়ে করতে হবে প্রস্থান।সেই সাথে বিপুল পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে শহীদ মিনাররে এক কিলোমিটার এলাকায় থাকছে মোবাইল টিমও।
আর এম/