সংস্কার ও ভোট নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েন চলছে আগে থেকেই। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াল বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার আগে এই সংঘর্ষে দুই পক্ষে উত্তেজনার আভাস মিলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বুধবার সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, সরকারে বসে সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দল গঠন করলে তা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।
বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে আছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল। চলতি মাসেই এই দলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার কথা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। তবে নতুন দল ঘোষণার আগেই আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে আরও একটি ছাত্র সংগঠনের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আবদুল কাদের, রিফাত রশীদ, হাসিব আল ইসলাম, তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, জাহিদ আহসান প্রমুখ সংগঠনটির সামনের সারিতে থাকবেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অংশটি ভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন নিয়ে অস্বস্তি আছে বিএনপিতে। দলীয় সূত্র বলছে, নতুন দল গঠনের পেছনে অন্য উদ্দেশ্য দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তাঁদের মতে, সংস্কার নিয়েই নির্বাচন বিলম্বের প্রক্রিয়া চলছে—এই সন্দেহ আগে থেকেই ছিল। এর মাঝে নতুন দল গঠন নিয়ে তোড়জোড় দেখে সেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে। তাই এ বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন দ্রুত হয়ে গেলে বিএনপি নির্বাচিত হবে—এটা অনেকটাই নিশ্চিত এখন। এটা বুঝতে পেরেই বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে একটি চক্র কাজ করছে। নির্বাচন বিলম্বিত করতে এই চক্র কাজ করছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই নতুন দল গঠন করার কাজ চলছে।
গতকাল রাজধানীতে ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে নতুন দল গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক দল গোছানোর এটা একটা কৌশল কি না, এখন সেই প্রশ্ন উঠেছে। নতুন দল গঠনের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা জনগণ মেনে নেবে না।’
একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্রসংগঠন ইতিমধ্যে করেছেন, আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। যখনই দল তৈরি করবেন, স্বাগত জানাব। তার অর্থ এই নয় যে আপনারা সরকারে বসে সরকারের সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আপনারা আপনাদের দল গঠন করবেন। সেটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।’
যদিও ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন দল গঠন নিয়ে বিএনপির চিন্তাকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, বিএনপির মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক শক্তিকে এমন উদ্যোগে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, নতুন দল গঠনকে কেন্দ্র করেই দেশের রাজনীতিতে দুটি পক্ষ সাংঘর্ষিক অবস্থানে রয়েছে, কুয়েটের ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। এর ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সুখকর হবে না বলে তাঁদের ধারণা। এদিকে দুটি পক্ষের সাংঘর্ষিক অবস্থান দৃশ্যমান হলেও এতে আরও পক্ষ জড়িত আছে বলেও অভিমত দিয়েছেন তাঁদের কেউ কেউ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামনে এমন ঘটনা আরও হবে। এ কারণে হবে যে, বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে তো শুধু বৈষম্যবিরোধীরাই নাই। সেখানে সাবেক ছাত্রলীগ, সাবেক ছাত্রশিবির, বহু কিছু আছে। সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছু হবে—এমন প্রত্যাশা করা কঠিন।’