বিশ্বব্যাপী প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস পোলট্রি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি এ শিল্পের টেকসই উন্নয়ন জরুরি। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ১৩ তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি সেমিনার।
ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এর আয়োজন করেছে। সেমিনারে দেশি-বিদেশি গবেষকেরা ৮৮টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করছেন। সেমিনারের প্রতিপাদ্য—সাসটেইনেবল পোলট্রি ফর ইমার্জিং বাংলাদেশ।
গবেষকেরা বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা না থাকলে পোলট্রি খামারের নিবন্ধন দেওয়া উচিত নয়। খামার পরিচালনায় অসতর্কতা জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ও ওষুধের ব্যবহার কমানো এবং উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করাও গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষকেরা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে নতুন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। তাই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন মুরগির জাত উদ্ভাবনের প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাস করে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করা জরুরি।
সেমিনারে আলোচিত হয়, পোলট্রি শিল্প দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে রিসাইক্লিং ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকারি প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণের ওপর জোর দেওয়া হয়।
ওয়াপসা-বিবির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে পুষ্টিসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। তাই অভিধান থেকে “অপুষ্টি” শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আগামীর বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক হবে। ভোক্তাদের ধারণা, পোলট্রিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে এখন প্রচুর পরিমাণে প্রিবায়োটিক, প্রোবায়োটিক, ফাইটোজেনিক, প্রয়োজনীয় তেল ইত্যাদি ব্যবহৃত হচ্ছে।’
ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘পোলট্রি বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রতিনিয়ত নতুন সমাধান আসছে। গত ২৮ বছরে ওয়াপসা-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিজ্ঞানের মধ্যে দৃঢ় সংযোগ স্থাপন করেছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা কখনো শেষ হয় না। কারণ, প্রতিদিনই নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। জরাজীর্ণ কাটিয়ে নতুন এক সম্ভাবনাময় দেশ গড়ার ডাক এসেছে সবার জন্য। নতুন ও অজেয়কে জয় করার চেষ্টা আমাদের নিত্যদিনের কাজের অংশ।’
বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন, সাধারণ খামারিদের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এই শিল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তাই খামার থেকে খাবারের টেবিল পর্যন্ত পুরো চেইনকে সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা জরুরি।
প্রথম দিনের সেশনগুলোতে ইউজিসি প্রফেসর ড. এস ডি চৌধুরী, বাকৃবির সাবেক উপাচার্য ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, বিএলআরআইয়ের সাবেক চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. গিয়াসউদ্দিনসহ আরও অনেকে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ টি এম মাহবুব-ই-এলাহী ও প্রফেসর ড. মো. বজলুর রহমান মোল্লা কো-চেয়ার ছিলেন।