অভ্যুত্থান এখনো বিপ্লবে পরিণত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা অভ্যুত্থান পর্ব পার করে এসেছি। সেই অভ্যুত্থান হয়তো বিপ্লবে পরিণত হয় নাই। সামষ্টিক রূপান্তর ঘটে নাই। আমরা সেই অভ্যুত্থান পর্বের ভেতরেই আছি।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পিআইবিতে (প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ) ‘তারুণ্যের উৎসব’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা মাহফুজ বলেন, ‘শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবের তৈরি করা দূষণ থেকে আমাদের তরুণ সমাজ মুক্ত হয়েছে। এই দূষণ থেকে ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত হতে হবে। সমাজের মধ্যে বোধের জন্ম হতে হবে। যেই বোধ থেকে আবু সাঈদ গুলি বুকে নিয়েছে। সেই বোধ সবার মধ্যে জাগ্রত হতে হবে।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে আদর্শিক গুন্ডাদের লালন-পালন করেছেন হাসিনা। নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞকে ন্যায্যতা দিয়েছে তারা। এই সিস্টেম এমনভাবে বানিয়েছে, যেখানেই হাত দিই—সেখানেই আদর্শিক গুন্ডা, সেখানেই লীগের দোসর পাই।’
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদে লীগ কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশের অংশ ছিল উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু প্রশাসন ও পুলিশযন্ত্র এ ফ্যাসিবাদের অংশ না, পুরো জাতিকে দূষিত করে রেখে গেছে। সামান্য সংস্কারে এটা বিলোপ হবে না। পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিশুদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দূষিত জাতি, ফ্যাসিবাদী জাতি তৈরি করতে চেয়েছে। সেটা এ শিশুরাই ভেঙে দিয়েছে।’
বাংলাদেশ এখনো আহত অবস্থায় আছে বলে মনে করেন মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা গত ছয় মাসে এই আহত অবস্থা লাঘবের চেষ্টা করেছি। তবে এখনো পুরোটা পারিনি। আমরা তখনই এই অবস্থা লাঘবে সক্ষম হব, যখন আমরা নির্বিচার হত্যার কারিগরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারব এবং তাদের বিচারকার্য সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’
জুলাই আন্দোলনে আহতদের সংখ্যা ‘অর্ধলক্ষ’ বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সরকারি হিসাবে ১২-১৪ হাজার আহত আছে। তবে আমরা মনে করি, প্রায় অর্ধলক্ষের মতো আহত হয়েছে সারা বাংলাদেশে। তাদের নাম হয়তো লিপিবদ্ধ হয়নি। তারা এখনো কাতরাচ্ছে, তাদের পরিবার কাতরাচ্ছে, তারা সবাই সংক্ষুব্ধ। আমরা তাদের সংক্ষুব্ধতাকে অনুভব করি।’
মাহফুজ আলম বলেন, ‘১৯৪৭ সালে রক্ত দিয়ে পাকিস্তান আনার পর তাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ পেয়েছি। গ্রামেগঞ্জে সর্বত্রই যুদ্ধ হয়েছে। সেই যুদ্ধের পরও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি। এরপর ১৯৯০ ঘটেছে, সবশেষ ২০২৪। ফলে বারবার ভুল করছি, বারবার হোঁচট খাচ্ছি। এবার হোঁচট খেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারব না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে সারা দেশে মেয়েরা ২ হাজার ৯০০ ম্যাচ খেলেছে। এটা নিয়ে প্রতিবেদন হয়নি। একটি খেলা বন্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘হাসিনার মতো ভয়ংকর স্বৈরাচারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বুড়োরা। বারবার বড় বড় মিছিল হয়েছে নয়াপল্টনে বা ঢাকাজুড়ে। আমরা কেউ দাঁড়াতে পারিনি। একদিন হঠাৎ তরুণেরা বলল—আমরা দাঁড়াব, এরপর দেখেন কী পরিবর্তন আসল। ওরা (আওয়ামী লীগ) কিছু করতে পারেনি। দেখেন তার পুরো পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার ইজ ওভার। যে ভয়ানক ম্যাসাকার (গণহত্যা) করেছে, এটাকে জাতিসংঘ বলেছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।’
দেশজুড়ে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসবের ধারাবাহিকতায় পিআইবির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটির মিলনায়তনেও এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবের অংশ হিসেবে মঙ্গল ও বুধবার পিআইবি চত্বরে আলোকচিত্র, গ্রাফিতি ও ভিডিও প্রদর্শন করা হচ্ছে।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা।