মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের মতো জাতীয় নেতাদের রেখে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা বিদেশের নেতাদের অনুসরণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
আজ শনিবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক জাগ্রত বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ‘দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা তরুণদের কাছে বিদেশি নেতারা ‘এত জনপ্রিয় কেন’ সেই প্রশ্ন তুলেছেন এই বিএনপি নেতা।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ জিয়ার মতো নেতারা আছেন। তাদের আদর্শ থাকার পরও তরুণরা কেন বাইরের নেতাদের অনুসরণ করছে? এই বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করা প্রয়োজন, নাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিভ্রান্তিতে থাকবে।’
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনের সামনে থাকা তরুণ ছাত্র নেতৃত্ব ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। দলটির গঠনের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বরাতে বিবিসি বাংলা বলছে, তাঁরা জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলার বা ধর্মভিত্তিক— কোনো আদর্শকেই সামনে রাখতে চান না।
এই নেতারা একটি মধ্যমপন্থী দলগঠনের কথা বলছেন বেশ কিছুদিন ধরে। প্রতিবেদনে বিবিসি বাংলা বলেছে, সফলতার মন্ত্র খুঁজতে তাঁরা তুরস্কের রিচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কাঠামো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন।
বিএনপি নেতা আলাল বলেন, ‘তুরস্কের এরদোয়ানের একে পার্টি, পাকিস্তানের ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং ভারতের কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি— এগুলোর কোনোটাই বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিসীমার মধ্যে নয়। অথচ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা এই তিনটি দলের আদলে তাদের দল ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণ করছে।’
‘আমার কাছে অবাক লাগে, আমাদের দেশের তরুণরা, যারা এই মাটিতে বেড়ে উঠেছে, যাদের শরীরে দেশের মাটির ঘ্রাণ লেগে আছে, তারা কেন বিদেশি নেতাদের মতবাদকে এত জনপ্রিয় মনে করছে? এই প্রবণতা দেখে আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এর মূল কারণ আসলে কী?’
আলাল বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন জনগণের সম্মিলিত আন্দোলনেরই ফল। বিএনপি এই আন্দোলন দেড় যুগ ধরে চালিয়ে আসছে। এখন সেই আন্দোলনের সফল পরিণতির পর ঠেলাঠেলি বা পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করার কোনো মানে হয় না।’
৫ আগস্ট ঘিরে ক্যান্টনমেন্টে ৬২৬ জন আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের অবস্থান জানতে চান আলাল। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন আছে, সেনাবাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের কিছু অংশ তাঁদের নিরাপদে বের করে দিয়েছেন। না হলে পরবর্তীতে এই আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের অবস্থান সম্পর্কে জাতিকে কিছু জানানো হলো না কেন?’
আলোচনা সভায় উপস্থিত অন্য বক্তার মতো মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই লড়াইয়ে বিভ্রান্তি বা বিভাজন সৃষ্টি না করে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম কলিম। সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ ও শাহজাহান মিয়া সম্রাটসহ অন্যান্য নেতা।