বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে সিরিয়ায়। মুক্ত সিরিয়াকে নতুন করে সাজাতে এখন ব্যস্ত সে দেশের জনগণ। ভাবা হচ্ছে তাদের পর্যটনশিল্প নিয়েও। স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তাদের আশা, সিরিয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত পর্যটনশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম হবেন তাঁরা।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যটন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে দামেস্কে। কাতার এয়ারওয়েজ, তুর্কি এয়ারলাইনসসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা দামেস্কে তাদের সেবা চালু করেছে।
যুদ্ধের আগে সিরিয়ার পর্যটন অবস্থা
গৃহযুদ্ধের আগে সিরিয়ার জিডিপির ১৪ শতাংশ ছিল পর্যটন ঘিরে। ২০১০ সালে ১০ মিলিয়নের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছিলেন দেশটি। সিরিয়ার ইতিহাসে প্রাচীন স্থাপত্য; যেমন প্যালমিরা, ক্রুসেডার যুগের দুর্গগুলো, দামেস্কের পুরোনো শহর এবং সমুদ্রসৈকতগুলো ছিল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর এসব ঐতিহাসিক স্থান ধ্বংস হতে শুরু করে। তবে বর্তমানে সিরিয়া পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে। হাবাব নামের একজন স্থানীয় হোটেল মালিক তাঁর হোটেল আবারও চালু করেছেন। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছেন। আমরা সবাই আশাবাদী, আগামী দিনে সিরিয়ার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।’
অতিরিক্ত সতর্কতা
সিরিয়া সফরের ব্যাপারে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, প্রায় ১৪ বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর সিরিয়া কি নিরাপদ? বর্তমানে সিরিয়ায় শাসন করছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তেহরির আল-শাম বা এইচটিএস। এটি আবার ব্রিটেনের কাছে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত। অনেক পর্যটক এখনো সিরিয়ায় যাওয়া নিয়ে দ্বিধান্বিত। যদিও পর্যটন ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সিরিয়ার পর্যটনশিল্প দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। তাঁরা মনে করছেন, পর্যটকেরা শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতে সাহায্য করবেন না, বরং সিরিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁদের আরও আগ্রহ তৈরি হবে।
পর্যটনের মাধ্যমে অর্থনীতি পুনর্গঠন
পর্যটন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে সিরিয়ার পুনর্গঠনে—অনুমান করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে শুধু যে অর্থনৈতিক লাভ হবে তা নয়; বরং সিরিয়ার মানুষ তাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশ্বকে ভালোভাবে জানাতে পারবে। রকি রোড ট্রাভেলের প্রতিষ্ঠাতা শেন হোরান বলেন, ‘পর্যটন হতে পারে সিরিয়ার জেগে ওঠার জন্য নিরাময়ের প্রক্রিয়া। এটি সিরিয়ার পুনর্গঠনে সহায়ক হবে।’
আজকের সিরিয়া এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখান থেকে নিজেদের পুরোনো পর্যটনশিল্পকে আবারও নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে। সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও এমনটা ভাবছেন। স্থানীয়রা প্রস্তুতি নিচ্ছেন অতিথিদের সঙ্গে নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচয় করিয়ে দিতে।
সূত্র: সিএনএন