নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর ২০২৫-এ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ মুহূর্তে অন্য কোনও নির্বাচনের পরিকল্পনা নেই। তবে সরকার চাইলে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে ইসি। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-সহ উন্নয়ন সহযোগী ১৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
জাতীয় নির্বাচনেই অগ্রাধিকার
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের ভাষণে বলেছিলেন, যদি সীমিত সংস্কারের ভিত্তিতে নির্বাচন হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য হয়, তাহলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। তবে যদি আরও কিছু কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন হয়, তাহলে ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শীঘ্রতম সম্ভাব্য সময় ধরে পরিকল্পনা করছে এবং এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে মনোযোগী রয়েছে।’
স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সরকারের
বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কী না, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘একটি প্রশ্ন উঠেছিল, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব কী না। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা বলছে, সব স্তরের স্থানীয় সরকার নির্বাচন শেষ করতে এক বছর সময় লেগে যায়। তাই জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনই নির্বাচন কমিশনের মূল অগ্রাধিকার। তবে সরকার যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ইসি সেটি বাস্তবায়ন করবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোন স্তরে এবং কীভাবে হবে, সেটি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। তখন ইসি মূল্যায়ন করবে যে, এটি জাতীয় নির্বাচনের ওপর কোনও প্রভাব ফেলবে কী না।’
আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার সাংবাদিকদের জানান, ‘নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমাদের কাছে সহায়তা চেয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারিতে আমাদের একটি কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং কী ধরনের সহায়তা দেওয়া সম্ভব তা নির্ধারণ করে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি। আমরা আশা করি, এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা নির্বাচন। তবে নির্বাচনের সময়সূচী নির্ধারণের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এখানে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’
বৈঠকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন, কানাডা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ডেনমার্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল।