যত দিন পর্যন্ত সমাজ শয়তানমুক্ত না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ সোমবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ডেভিল শব্দের অর্থটা কী? শয়তান। যারা শয়তান, তারাই ধরা পড়বে। এখন ছোট কি বড় শয়তান, সেটি বিষয় নয়।’
বড় ‘শয়তান’ ধরা পড়ছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ডেভিল হান্ট ডিক্লিয়ার (ঘোষণা) করার পর আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও আমরা ছাড় দিইনি। প্রথম দিনই পাঁচজনকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ছোট-বড় ব্যাপার না। যিনি এই জালে আসবেন, তিনিই ধরা পড়বেন।’
নির্দোষ ব্যক্তির শাস্তি নয়
অভিযানে কিংবা মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় কোনো নির্দোষ ব্যক্তি যেন শাস্তি না পায়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্দোষ ব্যক্তি কোনো অবস্থায় যেন শাস্তি না পান, সে জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমরা নিচ্ছি। আইজিপি (পুলিশ মহাপরিদর্শক) সাহেব এখানে আছেন। তাঁর ওখানে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এসপি, ডিসি, লিগ্যাল এইড অফিসার থাকবেন। এরপরও ওপরে আরেকটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যারা মিথ্যা মামলা করেছেন, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনের ভেতরে থেকে যতটা সম্ভব, তাঁদের (নিরাপদ ব্যক্তিদের) জন্য কাজ করবেন।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁরা অবশ্যই আইনগত সহায়তা পাবেন। শুধু আমাদের এখান থেকে নয়, লিগ্যাল এইড ডিপার্টমেন্ট আছে, সেখান থেকেও তাঁরা সহায়তা পাবেন।’
চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যরা চাকরি ফিরে পাবেন কি না, জানতে চাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ যদি দোষী হয়ে চাকরি হারান, তাঁকে কি ফেরানো উচিত? আপনারা যদি “না” বলেন, তাহলে আমিও “না” বলব। যদি (তাঁরা) নির্দোষ হয়ে থাকেন, সেটা তো আদালতের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
ভারতকে জবাব দেওয়ায় ধন্যবাদ
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে ‘সোচ্চার’ অবস্থান নেওয়ায় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তারা (ভারতীয় সংবাদমাধ্যম) মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করেছে। ওটার বিরুদ্ধে আপনারা (বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা) খুবই সোচ্চার ছিলেন। আপনারা সত্য সংবাদটা প্রকাশ করেছেন, যেন মিথ্যা সংবাদটা প্রকাশ না হয়। সে জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সত্য সংবাদ প্রকাশ করার কারণে পাশের দেশ আর আগের মতো করে না (গুজব ছড়ায় না)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সামাল দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকেও ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে পাশের দেশকে জবাব দিয়েছেন। তারপরও আমি বলব, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই দেখবে। কিন্তু ওই সময় যারা এগিয়ে এসেছেন, তাঁরা ভালো কাজই করেছেন।’
গরু আনতে গিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রাণহানির বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের লোকদের একটু সচেতন করতে হবে। হরিয়ানা থেকে গরুটা কিন্তু হেঁটে হেঁটে আসে না। তাদেরই (ভারতীয়) চোরাকারবারিরা নিয়ে আসছে, কিন্তু তারা বর্ডারটা ক্রস (সীমান্ত পার) করে না। আমাদের এদিকের লোকজনই ওদিকে যাচ্ছেন। আমাদের মনে হয়, গরু চোরাচালানি কমে যাবে। কারণ খামারিরা উৎপাদন বাড়িয়েছেন। হয়তো একটা সময় আসবে, আমাদের ওই দিকের গরু প্রয়োজনই হবে না।’
দাম বাড়ানো সওয়াব কি না
রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির শঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রমজানে আপনাদের দুটি দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রমজান কিন্তু মুসলমানদেরই। অন্যান্য ধর্মে দেখবেন, যখন তাঁদের উৎসব থাকে, তাঁরা জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেন। অথচ রমজানের সময় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। দাম বাড়ানোটা তাঁরা (ব্যবসায়ীরা) সওয়াব হিসেবে নেন কি না, আমি জানি না। দাম বাড়ানোটা কিন্তু সওয়াব না। এই যে তারা মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করছেন, এ জন্য শুধু জনগণের কাছে না, ওপরওয়ালার কাছেও দায়ী থাকবেন।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমি আশা করছি, এবারের রমজানে জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে। যেহেতু আমাদের ডাল, ছোলার আমদানি পর্যাপ্ত। খেজুরসহ অন্য জিনিসপত্রেরও সরবরাহ খুবই ভালো।’
সারের সংকট নেই
দেশে সারের কোনো সংকট নেই বলেও জানান অন্তর্বর্তী সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কোনো জায়গায় সারের সংকট দেখাতে পারবেন না। কোনো জায়গায় যদি সংকট হয়, ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। ব্যবস্থা হবে। এখন কিছু কিছু ডিলার (পরিবেশক) শয়তানি করছেন। দামও হয়তো একটু বেশি নিচ্ছেন। তাঁদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’