বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিনা সংগ্রামে মানুষের অধিকারও কখনও আদায় হয় না। আমি আগেও বলতাম, এখনও বলছি— সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, জ্ঞানপাপী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কখনও কিছু আদায় করা যায় না। রাজপথের বিকল্প নাই। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আমাদেরকে আবারও রাজপথে নামতে হবে। সময়টা এখন আমি বলতে পারছি না। হয়তো অতীতের চেয়েও কঠিন যুদ্ধ করতে হতে পারে।’
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রজন্ম অ্যাকাডেমি ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা ১৬ বছর আন্দোলন করেছি একটা দৃশ্যমান শত্রুর বিরুদ্ধে। এই দৃশ্যমান শত্রুটা শুধু যে বিএনপির শত্রু ছিল তা না। সারা জনগোষ্ঠীর একটা শত্রু ছিল। একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা এই সরককারকে বিতারিত করতে পেরেছি। কিন্তু বর্তমান সরকারের পেছনে কী কী অদৃশ্য শক্তি আছে, তা আমাদের জানা নাই। তারা কী নিজের কথায় চলে, না পরের কথায় চলে, তা অনুমান করা যায় না। তারা কী চায় তা আমি বুঝতে পারি না। তারা কী চায় তারা নিজেরা সেটা বুঝতে পারে কিনা তা আমি জানি না।
তিনি বলেন, ১/১১ এসেছিল বিশাল একটা সংস্কারের কথা বলে। কিন্তু সেটা জাতীয় জীবনে এবং রাজনৈতিক জীবনে একটি বড় কুসংস্কার হয়ে দেখা দিলো এবং লুটপাটের দৌরাত্ম্য শুরু হলো। এখন এটার ধারাবাহিকতাই কি এই সংস্কার? না আসলেই আমরা আমাদের রাজনীতির জীবনে যত অসুস্থতা আছে, সেটা থেকে সুস্থ হওয়ার সংস্কার?
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা প্রথমে ২৭ দফা সংস্কার দিয়েছিলাম। পরে ডানপন্থি-বামপন্থি ও ইসলামপন্থিদের মতামত নিয়ে ২৭ থেকে ৩১ দফায় উন্নীত করা হয়। সবার মতামতে ভিত্তিতে সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেওয়ার সময় ৩১ দফাই ছিল আমাদের মূল ভিত্তি। তাই ধরে নিতে পারি, এই ৩১ দফা জনগণের একটি সনদ। এই সনদের পরে আর কি সংস্কার থাকতে পারে?
তিনি বলেন, ১/১১ সময় দেখেছি অনেক কিংস পার্টির জন্ম। শেষ পর্যন্ত সেই কিংস পার্টিগুলো যে কোথায় হারিয়ে গেলো, তার কোন নাম গন্ধ নাই। ওরা আবার জার্সি পাল্টিয়ে আমাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঢুকে পড়লো। সে কারণেই এই সরকারের যে কিংস পার্টি করার অভিপ্রায় নাই, সেটা বুঝা কষ্ট।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরসহ সারা দেশের ভাঙচুরের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত দুই-তিন দিন ধরে যেটা হয়েছে, সেটা হঠাৎ করে ছয় মাস পরে এই চেতনা কেন? ফজরের আজানের সময় আজান না দিয়ে যদি সেটা মাগরিবের সময় দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি ৬/৭ তারিখ (আগস্ট) বা এক সপ্তাহের মধ্যেও ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভেঙে ফেলতো, তাহলে কিন্তু জনগণ এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতো না। জনগণ প্রশ্ন তুলছে এই কারণে যে, দীর্ঘ বিরতির পরে কেন এই ঘটনা। দীর্ঘ বিরতির পর কেন বিভিন্ন সাবেক মন্ত্রীদের বাড়িতে আক্রমণ?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই করছি। আমরা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। বিচারের আওতায় আনতে চাই। এটা চলমান প্রক্রিয়া থাকবে আইনের দৃষ্টিতে, বিচারের দৃষ্টিতে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত আমি হাসিনাকে আনতে পারবো না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি নির্বাচন করবো না, তা তো হয় না।
গয়েশ্বর বলেন, রাজনীতিবিদদের তিরস্কার, রাজনীতিবিদদের সমন্ধে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য, আর সরকারের নীরবতা সবকিছু মিলিয়েই মনে হয়, একটা গুমোট। যেকোনও সময় একটা নিম্নচাপের মতো চাপ আসতে পারে। সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সদা জাগ্রত, সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। আমার মনে হচ্ছে, রাজপথেই এর ফয়সালা হবে। তবে এটা যদি না হতো, তাহলে ভালো হতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি না হয়, তাহলে রাজপথের বিকল্প নাই। সে যুদ্ধ আরও কঠিন হতে পারে। কারণ বহুমুখী অদৃশ্য শক্তিকে মোকাবিলা করতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি রাখবেন।
সভার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ আয়োজক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।