Homeজাতীয়দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতির সুপারিশ কমিশনের

দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতির সুপারিশ কমিশনের


প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারে অন্তত অর্ধ্বশত সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল সংস্কার কমিশন। একইসঙ্গে প্রতিবেদনে বিগত আওয়াম লীগ সরকারকে চৌর্যতান্ত্রিক (ক্লেপ্টোক্রেটিক) সরকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গৌরবময় জুলাই-২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে চৌর্যতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ এখন একটি নতুন যাত্রার সন্ধিক্ষণে। এই নতুন যাত্রার সোপান বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনও বিকল্প নেই। সেই উদ্দেশ্যে দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছরের ৩ অক্টোবর গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে “দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন” গঠন করে। এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধি হলো— বিদ্যমান দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সংস্কার কমিশন দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা, আইনি কাঠামো, কার্যপদ্ধতি, জবাবদিহি, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও সক্ষমতা, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, পেশাগত দক্ষতা, দুর্নীতি প্রতিরোধী ভূমিকা এবং আন্তঃএজেন্সি সমযোগিতা ও সমন্বয়কে চিহ্নিত করেছে। সর্বসাধারণের মতামত সংগ্রহের পাশাপাশি এই সংস্কার কমিশন এসব ক্ষেত্র নিয়ে নানাভাবে বিভিন্ন স্তরের অংশীজনের মতামত সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত তথ্য, মতামত ও সুপারিশগুলো বিচার বিশ্লেষণের পর, সংস্কার কমিশন দুদককে কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথরেখা প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উত্থাপিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য ছয় মাস থেকে ৪৮ মাসের মধ্যে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি (৬ মাস, ১৮ মাস ও ৪৮ মাস) পথরেখা প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টি করবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনও ব্যক্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবেন না ও অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে সমর্থ হবেন না এবং যেখানে বুদ্ধিবৃত্তিমূলক ও কায়িক, সকল প্রকার শ্রম সৃষ্টিধর্মী প্রয়াসের ও মানবিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর অভিব্যক্তিতে পরিণত হইবে। যা সংবিধানে প্রতিস্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের পরিবর্তে একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করতে হবে। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদের অধীনে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে ন্যায়পালকে এই কৌশলপত্রের যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতায়িত করতে হবে।

তৃতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের যে কোনও রাষ্ট্রীয় চর্চা চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। চতুর্থ সুপারিশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৫ নম্বর সুপারিশে যথাযথ আইনি কাঠামোর মাধ্যমে কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের প্রকৃত বা চূড়ান্ত সুবিধাভোগীর পরিচয়-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি রেজিস্ট্রারভুক্ত করে জনস্বার্থে প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। ৬ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্বাচনি আইনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।

সাত নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, সেবা প্রদানকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিশেষত, থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাজস্ব অফিস, পাসপোর্ট অফিস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সব সেবা-পরিষেবা খাতের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে।

আট নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, আনকাক (UNCAC) এর অনুচ্ছেদ ২১ অনুসারে বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৯ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, দেশে ও বিদেশে আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বাংলাদেশকে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস এর বাস্তবায়ন করতে হবে।

১০ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া উচিত। দুর্নীতি দমন কমিশনের মর্যাদা ও গঠনের জন্য ১১ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। ১২ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে— ন্যূনতম একজন নারীসহ দুদক কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করতে হবে।

১২ নাম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ধারা ৮(১) এইরূপভাবে প্রতিস্থাপন করতে হবে— ‘আইনে, শিক্ষায়, প্রশাসনে, বিচারে, শৃঙ্খলা বাহিনীতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে, হিসাব ও নিরীক্ষা পেশায় বা সুশাসন কিংবা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে নিয়োজিত সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্যূন ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনও ব্যক্তি কমিশনার হবার যোগ্য হবেন।

দুদক কমিশনারের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে সুপারিশে বলা হয়েছে। ১৫ নম্বর সুপারিশে উল্লেখ করা হয়ে— দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪; ধারা-৭ এর অধীন গঠিত বাছাই কমিটির নাম পরিবর্তন করে ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ নির্ধারণ করতে হবে।

১৬ থেকে ১৮ প্রস্তাবিত ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির’ গঠন, দায়িত্ব ও কার্যপরিধি বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচারে ১৯ থেকে ২১ নম্বর সুপারিশে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটির (যাবাক) সংস্কার-বিষয়ে বলা হয়েছে। দুদকের তফসিলভুক্ত প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে তদন্ত-পূর্ব আবশ্যিক অনুসন্ধানের ব্যবস্থা বাতিল করার কথা বলা হয়েছে ২২ নম্বর সুপারিশে।

দুদক কর্তৃক একটি প্রসিকিউশন পলিসি প্রণয়ন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ২০ সংশোধনপূর্বক পুলিশকে পাঠানো অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। ২৪ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩২ক বিলুপ্ত করতে হবে।

দুদকের কার্যালয় রয়েছে এমন প্রতিটি জেলায় অবিলম্বে ‘স্পেশাল জজ আদালত’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে ২৫ নম্বর সুপারিশে। পরবর্তী সময়ে কোনও জেলায় দুদকের কার্যালয় স্থাপন করা হলে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওই জেলায়ও স্পেশাল জজ আদালত প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে।

দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের ক্ষেত্রে প্লিয়া বারগেইনিং ব্যবস্থার সম্ভাব্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলাফল নিবিড় পর্যালোচনা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত-গ্রহণ করতে হবে। ২৭ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে এনবিআর, সিআইডি, বিএফআইইউ, ডিরেক্টরেক্ট অব রেজিস্ট্রেশনসহ যেসব এজেন্সির সহযোগিতা প্রতিনিয়ত দুদকের প্রয়োজন হয়, সে সব এজেন্সিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদেশে দুদককে সহযোগিতার জন্য ফোকাল পারসন নির্দিষ্ট করতে হবে।

অতি উচ্চমাত্রার দুর্নীতি বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দুর্নীতি, বিশেষত অর্থপাচার তদন্তের ক্ষেত্রে প্রতিটি অভিযোগের জন্য দুদকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এজেন্সির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩০৯ সংশোধন করে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, দুদকের চাওয়া কোনও তথ্যাদি বা দলিলাদির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না। ৩০ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, সিএজি ও আইএমইডি কোনও দুর্নীতি উদঘাটন করলে কিংবা সন্দেহ করলে, তা যেন দুদকের নজরে আসে এবং দুদক প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে। তা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।

দুদক মহাপরিচালকের সংখ্যা ৮ থেকে ১২ তে উন্নীত করে তাদের অধীনে ১২টি অনুবিভাগ গঠন করা উচিত। বর্তমানে শূন্য পদগুলোতে অবিলম্বে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা কার্যকর করার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব নতুন জনবল-কাঠামো প্রণয়ন করে প্রয়োজনীয় পদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে।

দেশের প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সক্ষমতাসহ দুদকের জেলা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় সচিব নিয়োগের বিধান করতে হবে। তবে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত কোনও কর্মকর্তা বিজ্ঞাপিত পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হলে, মাতৃসংস্থা থেকে ছুটি সাপেক্ষে তিনি দুদকের সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন। মহাপরিচালক ও পরিচালক পদগুলোর (প্রেষণে বদলির মাধ্যমে নিযুক্ত মহাপরিচালক ও পরিচালক ব্যতীত) সব নিয়োগ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় হতে হবে। তবে বিজ্ঞাপিত যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণকারী দুদকের অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের জন্য মহাপরিচালক পদের ৬০ শতাংশ ও পরিচালক পদের ৭৫ শতাংশ সংরক্ষিত রাখতে হবে।

মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপপরিচালক— প্রতিটি স্তরে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পদের নিয়োগ প্রেষণে বদলির মাধ্যমে হতে পারে। তবে তদন্ত, প্রসিকিউশন বা বিচারের স্বার্থে বিচারকর্ম বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা এই হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।

আইনে উল্লিখিত স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের জন্য অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কিছুসংখ্যক স্থায়ী প্রসিকিউটর (১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ) নিয়োগের মাধ্যমে আইনের আংশিক বাস্তবায়ন শুরু করা যায় এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি বছর ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ চুক্তিভিত্তিক আইনজীবীর পদ স্থায়ী প্রসিকিউটর দ্বারা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৩৩ (১) পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

দুদকের সার্বিক কার্যক্রম বিশেষত অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, তদন্ত, গোপন অনুসন্ধান, ও প্রসিকিউশন সংক্রান্ত কার্যাদি এন্ড-টু-এন্ড অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে। ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের লোকবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি একে দুদকের বিদ্যমান অনুবিভাগগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত করে সরাসরি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করতে হবে।

দুদকের নিজস্ব প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি স্থাপন করে এর আর্থিক, প্রশাসনিক ও কারিগরি সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং অ্যাকাডেমির মাধ্যমে সব শ্রেণির কর্মকর্তাকে নিয়মিত বিরতিতে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৫৪(২) বিলুপ্ত করতে হবে। দুদকের নিজস্ব তহবিলের (ফান্ড) ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার অনুমোদিত বাৎসরিক বাজেটের অর্থ দুদকের তহবিলে জমা হবে। পাশাপাশি দুদকের মামলায় আদায়কৃত জরিমানা বা বাজেয়াপ্তকৃত অর্থের ন্যূনতম ১০ শতাংশ উক্ত তহবিলে জমা হবে।

দুদকের নিজস্ব বেতন-কাঠামো তৈরি করতে হবে। এই বেতন-কাঠামোর আওতায় প্রাপ্য বেতনের পরিমাণ জাতীয় বেতন-কাঠামোর ন্যূনতম দ্বিগুণ হতে হবে। উপরন্তু, তদন্ত, গোপন অনুসন্ধান ও এতদ্বসংশ্লিষ্ট কাজে নিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেন বেতনের বাইরেও পর্যাপ্ত ঝুঁকি ভাতা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত বার্ষিক বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি কর্মদক্ষতার জন্য দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে দুদকের নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।

দুদককে অতিদ্রুত সরকারের সহযোগিতায় বিভিন্ন তদন্ত বা গোয়েন্দা এজেন্সির সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে ফৌজদারি বিচারে সোপর্দ করতে হবে। দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটি বিলুপ্ত করে একটি স্বতন্ত্র অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা অনুবিভাগ গঠন করতে হবে।

৪৭ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমানে পরিচালিত প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের সাফল্য ও ব্যর্থতার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় দুদককে একটি দুর্নীতি প্রতিরোধী কর্মকৌশল প্রণয়ন করতে হবে এবং তদনুযায়ী স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশেষ করে দুর্নীতি যে শুধুমাত্র শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সকল ধর্মীয় মানদন্ডে একটি অগ্রহণযোগ্য, ঘৃণ্য, বৈষম্যমূলক, ধ্বংসাত্মক ও বর্জনীয় ব্যাধি, এই মানসিকতার বিকাশে সকল সম্ভাব্য, আকর্ষণীয় ও উদ্ভাবনী মাধ্যম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কৌশলগত এবং টেকসই প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনায় দুদককে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত