জীবদ্দশায় কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি ‘ছুটির ঘণ্টা’খ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল তাঁর পরিবারের সদস্যদের। অবশেষে মৃত্যুর প্রায় তিন বছর পর আজিজুর রহমানকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ এত দিনে দূর হয়েছে বলে জানান নির্মাতার মেয়ে আলিয়া রহমান বিন্দি।
ফেসবুকে বিন্দি লেখেন, ‘আমার বাবা আজিজুর রহমান একজন প্রকৃত মানুষ ছিলেন, যিনি অনেক পরিশ্রম করে এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তিনি কখনো সমঝোতা করেননি, কখনো চাটুকারিতা করেননি, সারা জীবন চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যয় করেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী গল্প, নিরলস পরিশ্রম আর নতুন প্রযুক্তির ওপর গবেষণা তাঁর ছবিগুলোকে নিয়ে গেছে অন্য মাত্রায়। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো তাই আলোচনায় আছে যুগের পর যুগ।’
রাষ্ট্রীয় পদক না পেলেও কোনো আক্ষেপ ছিল না আজিজুর রহমানের। জীবদ্দশায় কখনো এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেননি। তবে আজিজুর রহমান বেঁচে থাকলে এমন সংবাদে খুশি হতেন বলে জানান তাঁর মেয়ে। বিন্দি লেখেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে পাপার কোনো আক্ষেপ ছিল না। কিন্তু সন্তান হিসেবে আক্ষেপ ছিল আমাদের। ৫২টি চলচ্চিত্রের নির্মাতা, যিনি একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, একজন অঙ্কনশিল্পী, প্রযোজক, কাহিনিকার, একজন পোস্টার মেকার, সেট ডিজাইনার, টাইটেল মেকার, মেকআপ আর্টিস্ট—এত ভার্সেটাইল ব্যক্তিত্বের মানুষ একটা জাতীয় পুরস্কারের সম্মানও পাননি। কিন্তু আজ আমাদের পাপা আজিজুর রহমান বাংলাদেশের একুশে পদক পেয়েছেন। আমার বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। এটা আমাদের পরিবারের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। ধন্যবাদ বাংলাদেশ সরকারকে আমার বাবাকে এই সম্মানে ভূষিত করার জন্য।’
১৯৫৮ সালে ‘এ দেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে এহতেশামের সহকারী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন আজিজুর রহমান। তাঁর নির্মিত প্রথম সিনেমা ‘সয়ফুলমুলক বদিউজ্জামাল’ মুক্তি পায় ১৯৬৭ সালে। মোট ৫৪টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন আজিজুর রহমান। ‘ছুটির ঘণ্টা’ তাঁর সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা। এ ছাড়া ‘অশিক্ষিত’, ‘মাটির ঘর’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘অতিথি’, ‘রঙ্গিন রূপবান’, ‘দিল’ সিনেমাগুলোও পেয়েছে জনপ্রিয়তা। ২০২২ সালের ১৪ মার্চ কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আজিজুর রহমান।