Homeদেশের গণমাধ্যমেতামিম-মায়ার্সের ব্যাটে বরিশালের ‘লঞ্চে’ উঠলো শিরোপা

তামিম-মায়ার্সের ব্যাটে বরিশালের ‘লঞ্চে’ উঠলো শিরোপা


মিরপুর শেরে বাংলায় আকাশী নীলের উৎসব চললো প্রায় দুই ঘণ্টা। খাজা নাফা কিংবা পারভেজ হোসেন ইমনের একেকটি বাউন্ডারি গ্যালারি চুপ করে দিচ্ছিল। তবে এই দৃশ্যপট ফরচুন বরিশাল ব্যাটিংয়ে নামতে বদলে যায়। এবার গ্যালারিতে চললো লাল উৎসব। এমনিতেই গ্যালারিতে চিটাগংয়ের সমর্থকদের চেয়ে সংখ্যায় বেশি ছিল বরিশালের সমর্থকরা। তাদের আনন্দ চিৎকারে তামিম ইকবাল-তাওহীদ হৃদয়-কাইল মায়ার্সরা যেন আরও শক্তি পেয়ে গেলেন। গত আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে মায়ার্সের তান্ডবে প্রথমবার শিরোপা জিতেছিল বরিশাল। এবারও সেই মায়ার্স। তামিমের দারুণ শুরুর পর মায়ার্সের ব্যাটে চড়েই টানা দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুললো বরিশাল।

শুক্রবার চিটাগং কিংসের দেওয়া ১৯৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বরিশাল জয়ের নিশানা উড়ালো ৩ উইকেটে জিতে। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা টানা দুই শিরোপা নিয়ে লঞ্চে করে বরিশাল যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলো। গত আসরে শিরোপা জয়ের পর সমর্থকদের দাবি ছিল ট্রফি নিয়ে ঢাকা টু বরিশাল লঞ্চ যাত্রা! গত আসরে নানা কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এবার তামিম ইকবালসহ দলের মালিক ঘোষণা দিয়েছিলেন শিরোপা জিততে পারলে, দুটি ট্রফি নিয়ে লঞ্চ ধরবেন তারা!

পারভেজ হোসেন ইমন, খাজা নাফা ও গ্রাহাম ক্লার্কের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চিটাগং কিংস ১৯৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর করেছিল। তামিম শুরু থেকে চার-ছক্কার মারে প্রয়োজনীয় রান রেট ধরে রাখেন। শরিফুল ইসলাম ও নাঈম ইসলাম মাঝের ওভারে দুটি করে উইকেট নিলে পথ হারানোর আশঙ্কায় পড়েছিল ফরচুন বরিশাল। কিন্তু কাইল মায়ার্স বিপদ থেকে দলকে টেনে তোলেন। তবে শরিফুল আবার এক ওভারে জোড়া উইকেট নিলে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরে। শেষ ওভারে ৩ উইকেট হাতে রেখে ৮ রান লাগতো বরিশালের, প্রথম বলেই ছক্কা মারেন রিশাদ হোসেন। বাকি ২ রান নিতে সমস্যা হয়নি তাদের। ৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে জিতে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন বরিশাল।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলে ১১তম আসরের ফাইনাল ঘিরে সকাল থেকেই উৎসব মুখর পরিবেশ। খেলা সন্ধ্যা ছয়টায় হলেও স্টেডিয়ামের দর্শকরা দুপুরের পর থেকেই উপস্থিত হতে থাকেন। বেলা একটার দিকেই স্টেডিয়ামের সবগুলো গেটের সামনে দর্শকদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। মিরপুর স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার হলেও ফাইনাল ম্যাচে অন্তত ৩০ হাজার দর্শক ছিলেন। বিভিন্ন গেট দিয়ে টিকিটবিহীন বহু দর্শক ঢুকে পড়েছেন পরিচিতজনদের সহযোগিতায়। পুরো স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। গত কয়েক আসর ধরেই ম্যাড়ম্যাড়ে ফাইনাল হয়েছে। এবার যেন জমে উঠেছে। মাঠে গ্যালারি ভর্তি দর্শক। উইকেটে রান। সবকিছুই যেন ফাইনালকে রোমাঞ্চকর করে তুলেছিল! 

শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে চিটাগং ১৯৪ রান সংগ্রহ করে। বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ও তাওহীদ হৃদয় দারুণ শুরু পায়। পাওয়ার প্লেতে তারা তুলে ফেলে বিনা উইকেটে ৫৭ রান। ৭৬ রানের জুটি ভাঙে তামিমের বিদায়ে। ২৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন তিনি। এরপর স্কোরবোর্ডে দুই রান যোগ হতেই ডেভিড মালানও সাজঘরে ফেরেন। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে খানিক চাপে পড়ে যায় বরিশাল। হৃদয় ও মায়ার্স মিলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের ১১ বলে ১৮ রানের জুটি নাঈম ইসলাম ভাঙেন হৃদয়কে ফিরিয়ে। ২৮ বলে ৩২ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার।  

মায়ার্স ঝড়ের মধ্যে মুশফিককে পরের ওভারে ফিরিয়ে নাঈম চিটাগংকে স্বস্তি এনে দেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার ফের ম্যাচের লাগাম বরিশালের দিকে টানেন। ১৫ বলে ২৩ রানের লক্ষ্য থাকতে মায়ার্স ২৮ বলে তিনটি করে চার-ছয়ে ৪৬ রানে আউট হন শরিফুলের বলে। একই ওভারে চিটাগং পেসার মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন। 

ঠাণ্ডা মাথায় রিশাদ ও মোহাম্মদ নবী লড়াই টিকিয়ে রাখেন। শেষের আগের ওভারে ১২ রান আসে। যদিও ৬ বল বাকি থাকতে নবীর বিদায়ে চাপে পড়েছিল বরিশাল। শেষ ওভারে হুসেইন তালাতের প্রথম বলেই ৮ রানের সেই চাপ উড়িয়ে দেন রিশাদ। পরের বলেই সিঙ্গেল নিয়ে সমতায় ফেরে বরিশাল। স্ট্রাইকে থাকা তানভীর তৃতীয় বলে রান নিতে পারেননি। পরের বলটি ওয়াইড হতেই টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠে তামিম ইকবালরা। ৭ উইকেট হারিয়ে বরিশাল ছুঁয়ে ফেলে ১৯৫ রানের লক্ষ্য। শেষ দুই ওভারে দুই ছক্কা মেরে তামিম এবং মায়ার্সের সঙ্গে ম্যাচের জয়ের অন্যতম নায়ক রিশাদও। দলের স্টাফরা তাই তো তাকে কাঁধে নিয়ে ড্রেসিংরুমে গেছেন। 

নাফা ও ইমন ওপেনিংয়ে শতাধিক রান যোগ করেন

চিটাগংয়ের বোলারদের মধ্যে শরিফুল দারুণ বোলিং করেও দলকে জেতাতে পারেননি। ৪ ওভারে ৩৪ রান খরচায় তার শিকার চারটি উইকেট। এছাড়া নাঈম নেন দুটি উইকেট। বিনুরা ফার্নান্দো নেন একটি উইকেট।

এর আগে টস জিতে বোলিং নেন বরিশালের অধিনায়ক তামিম। তবে তাদের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ কোনোভাবেই ভাঙতে পারছিল না চিটাগংয়ে ওপেনিং জুটি। অবশেষে ১৩তম ওভারে এসে খাজা নাফাকে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান এবাদত হোসেন। আর তাতেই ৭৬ বলে ১২১ রানের জুটি ভাঙে নাফা ও ইমনের। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকেন চিটাগংয়ের দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লেতে কোনও উইকেট না হারিয়ে তারা তুলে ফেলে ৫৭ রান। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরও তাদের রানের গতি বরিশালের কোনও বোলারই রুখতে পারেননি। নাফা ৪৪ বলে ৬৬ রানে থামলে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর রানের গতি কিছুটা কমে যায়। যদিও কিছুটা সময় নেওয়ার পর ইমন ও গ্রাহাম ক্লার্ক হাত খুলে খেলতে থাকেন।

নাফার বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে ইমন ও ক্লার্ক মিলে গড়েন ৭০ রানের জুটি। পায়ে আঘাত পেয়ে বেশ কিছুক্ষণ খুঁড়িয়ে ব্যাটিং করছিলেন ক্লার্ক। শেষমেষে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউটে কাটা পড়েন ২৩ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে। পরের বলেই লম্বা শট খেলতে গিয়ে আউট হন শামীম হোসেন। শুরুতে যেভাবে ব্যাটিং করছিল চিটাগং, মনে হচ্ছিল অনায়াসেই দুইশ পেরিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ রানের আক্ষেপ থাকলো। ইমন ৪৯ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। 

বরিশালের বোলারদের মধ্যে একটি করে উইকেট নেন এবাদত ও মোহাম্মদ আলী। পাকিস্তানি এই পেসার চার ওভার বোলিং করে সবচেয়ে কিপ্টে বোলার। প্রথম তিন ওভারে ১৬ রান খরচ করা আলী শেষ ওভারে খরচ করেন মাত্র ৬ রান। তার শেষ ওভারে বোলিংয়ে দুইশ ছুঁতে পারেনি চিটাগং।

ফাইনালের ম্যাচসেরা হয়েছেন তামিম। আর ‍টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত