Homeসাহিত্যফ্যাক্টচেক /শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পাল্টাতে গিয়ে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনের মৃত্যু—দাবিটি...

ফ্যাক্টচেক /শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পাল্টাতে গিয়ে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনের মৃত্যু—দাবিটি সত্য নয়


ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ছিল এই গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাসপূর্তির দিন। এদিন রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর ফ্যাসিবাদ নির্মূলের ডাক দেন। এরপর ফেসবুকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক আসে।

রাত ৮টার দিকে দলে দলে লোকজন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ির ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর করেন এবং ১০টার দিকে আগুন দেওয়া হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের বাসভবন ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। পাশাপাশি, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের নাম পরিবর্তন ও মুর‍্যাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুজন মারা গেছেন—এই দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তিকে একটি বহুতল ভবনের কিছুটা ওপরে মই দিয়ে বেয়ে উঠে ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা’ লেখার কাছে গিয়ে লেখাটি ভাঙার সময় পড়তে দেখা যায়। এই সময় আশপাশের লোকজনের চিৎকার শোনা যায় এবং পড়ে যাওয়া ব্যক্তিকে তুলে সাহায্য করতে দেখা যায়।

‘কেমিক্যাল আলি (Chemical Ali)’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে ৩টার দিকে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুইজন উপর থেকে সরাসরি আল্লাহর কোলে উঠে গেছে। আমিন।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি সাড়ে নয় লাখবার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ৫ হাজার শেয়ার হয়েছে। পোস্টটিতে ৮৮টি কমেন্ট পড়েছে। কমেন্টে অনেকে সত্য মনে করে কমেন্ট করেছেন।

ফওজিয়া নিজাম তামান্না (Fowzia Nizam Tamanna) নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্টটিতে লেখা হয়েছে, ‘শহীদ হয়েছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

মো. মজিদ (Md Mojid) লিখেছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সীমা লংঘন কারীদের আললাহ তালা কখনো পছন্দ করেন না।’ (বানান অপরিবর্তিত)

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম ফলক ভাঙতে গিয়ে পড়ে গিয়ে একজন মারা গিয়েছে দাবিতে ওপর থেকে ধারণ করা প্রায় একই দৃশ্যের একটি ভিডিও ‘জয় বাংলা’ নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আজ সকাল ১০টার দিকে পোস্ট করা হয়।

‘আলহামদুলিল্লাহ। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে উপর থেকে পড়ে স্পট ডে*ড। নিজের চোখেই দেখেন প্রকৃতি কখনো ছেড়ে দেয়না।’—এই ক্যাপশনে ‘টেলেন্ট কান্তি দাস (Telent Kanti Das), প্রামানিক আব্দুল হাকিম’ এবং ‘আব্দুল আজিজ (Abdul Aziz)’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

যাচাইয়ের শুরুতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের লোগো দেখা যায়।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুজন মারা যাওয়ার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের লোগোর উপস্থিতি। ছবি: স্ক্রিনশট

শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুজন মারা যাওয়ার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের লোগোর উপস্থিতি। ছবি: স্ক্রিনশট

এসব তথ্যসূত্রে ফেসবুকে সার্চ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ১টার দিকে পোস্ট করা হয়।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুজন মারা যাওয়ার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুজন মারা যাওয়ার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের ফেসবুক পেজের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, ‘বঙ্গমাতা হলের নেইম-প্লেট খোলার সময় মই থেকে পড়ে আ’হ’ত শিক্ষার্থী।’

অর্থাৎ, ভিডিওটি গতকাল বুধবার রাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধারণ করা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে আজকের পত্রিকার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. ফাহাদ বিন সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, গতকাল বুধবার রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে ঘিরে উত্তেজনা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক মই বেয়ে ভাঙতে গিয়ে মই পিছলিয়ে পড়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের চারুকলা বিভাগের শাহজালাল আহমেদ জনি নামের এক শিক্ষার্থী আহত হন। তবে উক্ত ঘটনায় আর কেউ হতাহত হয়নি।

তিনিও জানান, শাহজালাল আহমেদ জনি আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহজালাল আহমেদ জনির সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সাদ কবীরের ফোন নম্বর দেন।

সাদ কবীরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে জানান, শাহজালাল আহমেদ জনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এই বিষয়ে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রোকন বাপ্পীও একই কথা জানান।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিক্ষার্থী মৃত্যুর বিষয়টি মিথ্যা। গতকাল মই থেকে পড়ে একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বর্তমানে সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

শাহজালাল আহমেদ জনির বিষয়ে খোঁজ নিতে মুঠোফোনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতিউর রহমানের সঙ্গে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের কথা হয়। তিনি জানান, শাহজালাল আহমেদ জনি মারা যান নি। সে ওপর থেকে পড়ে গিয়ে দুই হাত ও মাথায় ব্যাথা পেয়েছে। সে অর্থপেডিক্স সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এ ছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচিতে গিয়ে হতাহতের বিষয়ে গুগলে সার্চ করে কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় দুজন মারা যাওয়ার দাবিটি সত্য নয়। প্রকৃতপক্ষে, গতকাল বুধবার রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণকে ঘিরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক মই বেয়ে ভাঙতে গিয়ে মই পিছলিয়ে পড়ে শাহজালাল আহমেদ জনি নামের এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার দৃশ্য দুজনের মৃত্যুর দাবিতে ছড়িয়ে পড়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত