দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর হওয়ার পর এই খাতে রাজস্ব আয় ও আদায়ের গতি— দুটোই বেড়েছে। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা দেখিয়ে তামাক আইন ২০২১ সংশোধনের বিরোধিতা করে আসছে, যার কোনো বাস্তবভিত্তি নেই।
২০০৫ সালে আইনটি পাসের পর প্রথম দুই অর্থবছরে তামাক খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছিল যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও ৩৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৩ সালে সংশোধনের পরও একই চিত্র দেখা যায়। কিন্তু পরের দুই অর্থবছরে রাজস্ব বাড়ে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির কূট-কৌশল: গণমাধ্যমের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞরা। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্সের (আত্মা) আয়োজন করে।
কর্মশালায় জানানো হয়, আইন সংশোধন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছে। রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি তারা খুচরা বিক্রেতাদের কর্মসংস্থান হারানোর মতো ভিত্তিহীন তথ্যও উপস্থাপন করছে। অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায় জরিপ ২০২১ অনুযায়ী, দেশে সব ধরনের খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৯ হাজার। এর মধ্যে খাদ্য, পানীয় ও তামাকপণ্য বিক্রেতা মাত্র ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১টি, যারা অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি তামাকও বিক্রি করে। তাই আইন সংশোধনের ফলে বড় ধরনের কর্মসংস্থান সংকটের আশঙ্কাও অবাস্তব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২১ সালে আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো এই আইনটি প্রলম্বিত ও বাজেটকে প্রভাবিত করতে ব্যবসায়িক সংগঠন ও বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে আসছে। বিড়ির মূল্য না বাড়াতে শ্রমিকদের মানববন্ধন করানো, কলাম-নিবন্ধ প্রকাশ, সুপারিশমূলক চিঠি প্রদানসহ নানা কৌশল তারা অবলম্বন করছে।
কর্মশালায় আরো জানানো হয়, বাংলাদেশে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর ৩৫.৩ শতাংশ এখনো তামাক ব্যবহার করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাকজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।