আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এর বিপরীতে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। তবে রমজান মাসকে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে চেষ্টা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন রমজান ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এসব কথা জানান। এ সময় জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রোজায় নয়, গ্রীষ্মে লোডশেডিং হতে পারে জানিয়ে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, রোজাকে লোডশেডিং মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। লোডশেডিং নানা কারণে হয়, টেকনিক্যাল কারণ ছাড়া লোডশেডিং যাতে না হয় সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোজায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতে চাহিদা থাকবে। আমরা পুরোপুরি সরবরাহের প্রস্তুতি নিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি সমস্যার কারণে প্রাথমিকভাবে লোডশেডিং করতে হয়। প্রথম মিটিং করেছি অর্থের সংস্থানের জন্য, রোজা এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। রোজার মাসে যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হবে, তার জন্য যে পরিমাণ টাকা ও ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন ৯০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। রোজার মাসের জন্য ১২০০ মিলিয়ন সরবরাহ এবং এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ১১০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে যাবে।
রমজানে গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অন্যদিকের সরবরাহ কমাচ্ছি না। বাড়তি ৪ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। যা বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে দিয়েই সম্ভব।
তিনি বলেন, গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে আমরা যদি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) তাপমাত্রা ২৫ অথবা ২৬ ডিগ্রিতে রাখতে পারি তাহলে ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। তাহলে লোডশেডিংয়ে প্রয়োজন হবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনও উদ্যোগ নিচ্ছি না, অনেক চাপ থাকার পরও আমরা দাম বাড়াইনি। গ্যাসের দাম নতুন শিল্পে বাড়বে, বিদ্যমান শিল্পে আগের দর থাকবে। আমদানি করতে খরচ পড়ছে ৭৫ টাকা, সেই টাকায় এনে ৩০ টাকায় দেওয়া সম্ভব না।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কাছে বিভিন্ন দেশীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পাওনা রয়েছে। অনেকেই তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে।
কবে নাগাদ বকেয়া পুরোপুরি পরিশোধ করা সম্ভব হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কতদিনের মধ্যে বকেয়া পুরোপুরি পরিশোধ হবে এ কথা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে আমরা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বিপিসির সব বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেকার বসে থাকা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, আমরা নতুন করে কোনও পাওয়ার প্লান্টের চুক্তি নবায়ন করছি না।
এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পিক আওয়ারে সেচ পাম্প বন্ধ রাখা, রাত ১১টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সেচ পাম্প চালাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা, ইফতার, সাহরি ও তারাবির নামাজে লোডশেডিং না করা, মসজিদগুলোর এসি ২৫ ডিগ্রির নিচে না নামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ওভারলোডেড ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা হবে।