বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে পাকিস্তানে উন্মাদনা চরমে। পাকিস্তানের তিন ক্রিকেটার—ফাহিম আশরাফ (ফরচুন বরিশাল), খুশদিল শাহ (রংপুর রাইডার্স) এবং উসমান খান (চিটাগং কিংস)—বিপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে ফিরেছেন এবং আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডেও জায়গা পেয়েছেন।
বিপিএলের প্রতি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) বিশেষ নজর থাকায় এই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বেশ আলোচনায় এসেছে। এই প্রসঙ্গে ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলা পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলীর প্রতিক্রিয়াও উঠে এসেছে।
প্রথম কোয়ালিফায়ারে বরিশালের হয়ে প্রথমবার সুযোগ পেয়ে ২৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন মোহাম্মদ আলী, যা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট। বিপিএল নিয়ে পাকিস্তানে কেমন আগ্রহ আছে—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ‘শুধু বিপিএল নয়, পাকিস্তানে সব ধরনের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকে। আমি এবারই প্রথমবার বিপিএলে খেলছি এবং দারুণ উপভোগ করছি।’
বিপিএলের শুরু থেকেই ফরচুন বরিশালের সঙ্গে থাকলেও প্রথম ১২ ম্যাচে সুযোগ পাননি এই পেসার। তবে যখন সুযোগ পেলেন, তখনই বাজিমাত করলেন। দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে বরিশালকে তুললেন ফাইনালে।
নিজের সুযোগ কাজে লাগানো নিয়ে আলী বলেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আমি খেলি বা না খেলি, দলকে জিততেই হবে। তবে সুযোগের জন্য প্রস্তুত থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেকে তৈরি রেখেছিলাম এমন একটা সময়োপযোগী পারফরম্যান্সের জন্য, বিশেষ করে কঠিন পরিস্থিতিতে। তাই আজকের পারফরম্যান্স আমাকে আরও আনন্দ দিচ্ছে।’
তার শেষ ওভারে একাই চারটি উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি, যা বিপিএলের ইতিহাসে প্রথম। এই রেকর্ড গড়ার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন ‘এক ওভারে চারটি উইকেট নেওয়াটা সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি।’
মোহাম্মদ আলী এখনো পাকিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টিতে খেলেননি। এখন পর্যন্ত তিনি মাত্র ৪টি টেস্ট খেলেছেন, যার মধ্যে ২০২৪ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি টেস্টও ছিল।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার রেকর্ড ঈর্ষণীয়—৪৭ ম্যাচে ১৭৪ উইকেট, গড় মাত্র ২৫.০২। তবে নিয়মিত লাল বলের ক্রিকেট খেলার কারণে অনেকেই তাকে সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত মনে করেন না।
এই বিষয়ে আলী বলেন, ‘অনেকেরই ধারণা, যারা লাল বলের ক্রিকেটে পারদর্শী, তারা সাদা বলের ক্রিকেটে ভালো করতে পারে না। কিন্তু আমার সাদা বলের পারফরম্যান্সও বেশ ভালো। আমি সব ফরম্যাটের ক্রিকেট উপভোগ করি এবং সেটাই আমার মূল লক্ষ্য।’
টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘টেস্ট ও চারদিনের ক্রিকেটই সবচেয়ে কঠিন ফরম্যাট। যখন একজন বোলার নিয়মিত লাল বলে খেলে, তখন সীমিত ওভারের ক্রিকেট তার জন্য তুলনামূলক সহজ হয়ে যায়। কারণ চারদিনের ক্রিকেটে সবসময় ভালো জায়গায় বোলিং করতে হয়, যা সীমিত ওভারের খেলাতেও কার্যকর হয়।’
বিপিএলে তার এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স পাকিস্তানের নির্বাচকদের নজর কাড়বে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এক ম্যাচেই মোহাম্মদ আলী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে প্রস্তুত তিনি।