দুই বছর ধরে সিইও (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা) ছাড়া কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ড্রাগন গ্রুপের প্রয়াত কর্ণধার মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের (ওসি কুদ্দুস) মালিকানাধীন রূপালী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সিইও পদটি শূন্য রয়েছে, যা বিমা আইন, ২০১০-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিমা আইনের ৮০ ধারা অনুযায়ী, বিমা কোম্পানিকে তিন মাসের মধ্যে সিইও নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষ কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিয়োগ সম্ভব না হলে আরও তিন মাস সময় দেওয়া হয়। তবে ছয় মাসের বেশি সিইও পদটি খালি রাখা আইনসম্মত নয়। কিন্তু রূপালী ইনস্যুরেন্স দীর্ঘদিন এই বিধান লঙ্ঘন করেই পরিচালিত হয়ে আসছে।
এ পরিস্থিতিতে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) রূপালী ইনস্যুরেন্সকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন সিইও নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। গত ২৯ জানুয়ারি আইডিআরএর পরিচালক সালেহীন তানভীর গাজী স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি রূপালী ইনস্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, রূপালী ইনস্যুরেন্সের শেষ সিইও ছিলেন পি কে রয়, যিনি ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। এরপর এখন পর্যন্ত নতুন সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তখন থেকে ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওসি কুদ্দুসের মেয়ে ফাওজিয়া কামরুন তানিয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২০২৩ সাল থেকে সিইও পদটি শূন্য থাকার কারণে জরিমানা করা হয়েছে। আইডিআরএ তাদের ১৭৮ তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত সিইও ফাওজিয়া কামরুন তানিয়া বলেন, সিইও পদে আবেদনের প্রস্তুতি চলছে। আমি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। সিইও হিসেবে আবেদনের জন্য সেখানকার কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন, যা পেলেই আবেদন করব। তবে কিছু সময় লাগবে।
সরকারি বন্ডে বিনিয়োগে অনিয়ম
সিইও নিয়োগের বিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতাও মানছে না প্রতিষ্ঠানটি। বিমা আইনে বলা হয়েছে, সাধারণ বিমা কোম্পানিকে মোট সম্পদের ন্যূনতম ৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থ সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। কিন্তু রূপালী ইনস্যুরেন্স এই ন্যূনতম সীমাও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আইডিআরএর তথ্য অনুযায়ী, রূপালী ইনস্যুরেন্স ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন প্রান্তিকে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে মাত্র ৫ দশমিক ২১ শতাংশ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী তাদের আরও প্রায় ২ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ করার প্রয়োজন ছিল। নন-লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ আইনের আওতায় এটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এই অপরাধের দায়ে কোম্পানিকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বিমা আইন, ২০১০-এর ধারা ৪১ এবং বিমা (নন-লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ) প্রবিধানমালা, ২০১৯-এর ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সাধারণ বিমা কোম্পানির সম্পদের অন্যূন ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে। সম্পদের বাকি অংশ ৯টি নির্ধারিত খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। জীবনবিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে এই হার ন্যূনতম ৩০ শতাংশ।
সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ফাওজিয়া কামরুন তানিয়া। তিনি বলেন, বিনিয়োগ কম ছিল, তবে আস্তে আস্তে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে।
আইডিআরএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রূপালী ইনস্যুরেন্স বছরের পর বছর এই অনিয়ম করে আসছে। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সম্পদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৬১ কোটি ৭১ লাখ ২৯ হাজার ৩৮ টাকা। এর মধ্যে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছিল মাত্র ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা মোট সম্পদের মাত্র ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ আরও ৬ শতাংশ সম্পদ সরকারের বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকলেও তা করা হয়নি। পূর্ববর্তী বছরগুলোর তথ্যেও একই অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে বলে আইডিআরএ জানিয়েছে।