জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর সংস্কার করে অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণাসহ পাঁচ দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির কথা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার ৬৪ জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে একটি লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খান উল্লেখ করেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে ইতিমধ্যে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে গুপ্ত হামলা, ঝটিকা মিছিল ও গণসংযোগ শুরু করেছে। ছাত্র-জনতা-নাগরিক অভ্যুত্থানের সরকারকে উৎখাত করতে দেশব্যাপী নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে তারা হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, ‘গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের ৫৭২ জন নেতা-কর্মীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। গণহত্যার মামলার আসামিরা কীভাবে জামিন পাচ্ছে, আমরা সরকারের কাছে সেটির স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চাই। গণ-অভ্যুত্থানে বর্বরোচিত হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালানো অপরাধীদের কতজন গ্রেপ্তার হয়েছে সরকারের কাছে সেটাও জানতে চাই।’
গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার ব্যতীত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘জনগণের পক্ষ থেকে আগামীকাল ৫ ফেব্রুয়ারি জুলাই গণহত্যায় জড়িত গণহত্যাকারীসহ বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমে দেশের সম্পদ লুটপাট ও দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের দাবিতে ৬৪ জেলায় প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
এ সময় তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর সংস্কার নিশ্চিতে অভ্যুত্থানের অংশীজনদের নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন এবং পাঁচ দফা দাবি জানান।
এসব দাবির মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানসহ গত ১৬ বছরের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আহত, ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদদের সঠিক তালিকা তৈরি করা। এদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার এবং রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। লুটপাট, অর্থ পাচারে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার করা এবং বিগত ১৬ বছরে গুম-খুন ও ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার করা।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি জনাব নুরুল হক নুর বলেন, ‘পুলিশের গাড়িতে আক্রমণ করে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা যখন বলছি গণহত্যাকারীদের বিচার করতে হবে, সেখানে এই সরকারকে সড়াতে আওয়ামী লীগ হরতাল ঘোষণা করছে। আমরা মনে করি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এখনো আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিচার করা যায়।’
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে নুর বলেন, ‘সরকার গঠনের সময় কোথায় থেকে লিস্ট এসেছে, কীভাবে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন হয়েছে তা রাজনৈতিক দলগুলো জানে না। তারপরেও দেশ ও জাতির স্বার্থের আমরা সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও এই সরকারের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। মেজর পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সঙ্গে আলাপ করে অতি দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করা হোক।’
গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, আরিফ তালুকদার, ফাতেমা তাসনীম প্রমুখ।