বাংলাদেশ বিমানকে একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, এটিকে লাভজনক ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দেওয়া উচিত।
আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে টাস্কফোর্স কমিটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, লোকসান কমাতে বিমানকে দুই ভাগ করে এক ভাগ বিদেশি সংস্থাকে দিয়ে পরিচালনা করা হবে এবং অন্য ভাগ বিমানের মাধ্যমে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। উভয় সংস্থাকে সমান সুযোগ দিয়ে নির্ধারিত সময় শেষে মূল্যায়ন করা হবে, কোনটি ভালো করছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমান পুনর্গঠনের জন্য একটি নতুন এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার সম্ভাব্য নাম ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’। এটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং বিমানের সম্পদের অংশবিশেষ ব্যবহার করবে। দুই সংস্থা আলাদা বাজার ও রুট পরিচালনা করবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে নতুন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকার শহরতলিতে ‘গ্লোবাল এক্সিলেন্স সেন্টার’ স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) শিক্ষার উন্নয়ন ও গবেষণায় কাজ করবে। পাশাপাশি পরিবেশবিজ্ঞান, নবায়নযোগ্য শক্তি ও জৈবপ্রযুক্তি সম্পর্কিত গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক মডেলের ভিত্তিতে এটি গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহিত করবে। সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিএসবিসিসিঅ্যান্ডআর) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে গবেষণা চালাবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের গবেষণা, শিক্ষা ও পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি সাধিত হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, একনেকে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে এখন থেকে জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এত দিন বলা হতো, বাপেক্সের সক্ষমতা নেই। এখন এটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে মালয়েশিয়ার মতো অন্যান্য দেশের সহায়তা নেওয়া হবে। তবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বাপেক্সকে শক্তিশালী করা হবে।
প্রতিবেদনে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নতুন নীতিমালা ও কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিনিয়োগসংক্রান্ত নীতির অস্পষ্টতার কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হলে ভালো ফল পাওয়া যেত। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) শিক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ভারত স্বাধীনতার পরপর প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছিল, যা একসময় বিশ্বমানের ছিল। তবে এখন এআই যুগ, তাই নতুন প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
টাস্কফোর্সের প্রধান কে এ এস মুর্শিদ বলেন, এখন রাজনৈতিক সরকার নয়, অর্থনীতির স্বার্থে এখনই সুযোগ সংস্কারের। দেশের মানুষ বছরের পর বছর চাঁদাবাজি দেখে আসছে, কিন্তু এটি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। একে রোধ করতে ‘অ্যান্টি গুন্ডা স্কোয়াড’ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি কার্যকর হবে কি না নিশ্চিত নয়, তবে একটি উদ্যোগ হিসেবে শুরু করা যেতে পারে। বর্তমান সরকার সংস্কার শুরু না করলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক জটিলতার কারণে এটি কার্যকর করা কঠিন হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও কমিটির সদস্য ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসব কারণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ও টাস্কফোর্সের সদস্য আখতার মাহমুদ বলেন, গত ১২-১৪ বছরে দেশ যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে। এই সময়ে মাত্র ৭ শতাংশ বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়।
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ দেশের সেবা খাতগুলোর সংস্কার করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, গত কয়েক বছরে ২০০ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে, কিন্তু এর প্রত্যাশিত রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে না।