ইভান আলেক্সিভিচ বুনিন রাশিয়ান কবি ও ঔপন্যাসিক, যিনি রুশ সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার পান ১৯৩৩ সালে। ম্যাক্সিম গোর্কি বুনিনকে রাশিয়ার জীবিত লেখকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচনা করেছিলেন। রোমান্টিক গতিময়তায় লেখা তার ‘মিতিয়াস লাভ’ উপন্যাসটি যৌবনের প্রেমবোধ ও অনুভব নিয়ে সরল, নিরীহ ও বিয়োগান্ত এক মনোগ্রাহী লেখা। সাধারণকে অসাধারণে পরিণত করার গোপন রহস্য ও নিপুণ গদ্যময়তা ইভান বুনিনের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ‘মিতিয়াস লাভ’ ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন, ম্যাডেলিন বয়েড এবং বইটির ভূমিকা লিখেছেন আর্নেস্ট বয়েড।
অধ্যায় : ৪
এপ্রিলের দিকে কাতিয়ার এতটাই পরিবর্তন হলো যে, তাকে আর চেনা যাচ্ছিল না। সে যেন একজন অপরিচিত কেউ।
এর একটি কারণ হতে পারে, তার পরীক্ষার সফলতা, আবার শুধু যে পরীক্ষার সফলতার কারণেই সে সফল হয়েছে, তাও বলা যাচ্ছে না। এই পরিবর্তনের পেছনে আরো অনেকগুলো কারণ ছিল। মিতিয়া নিজেকেও বুঝতে পারে না, কাতিয়াকেও বুঝতে পারে না, তাই হতবুদ্ধি হয়ে গেল। যখন চারপাশে বসন্তের সমারোহ এসে গেল, কাতিয়া নিজেকে নতুনভাবে পরিচয় করাতে শুরু করল। যেন সে অতিরিক্ত সচেতন এবং সবসময় দৌড়ের মধ্যে আছে। সে প্রতিদিনই নতুন নতুন জামা পড়তো, যদিও সেগুলো ডিজাইনের দিক থেকে সাদামাটা, কিন্তু খুব দামি। যখন সে সিল্কের কাপড় পরে ফিটফাট হয়ে আসে, যদিও এখন আর পায়ে হেঁটে না এসে প্রতিদিন শকটে চড়ে আসে, রাস্তাটা দ্রুত পার হয়ে থিয়েটার রুমে চলে যায়ーতার মুখমণ্ডল তখন ঘোমটায় ঢাকা থাকে। এই যে অন্ধকার পথ দিয়ে কাতিয়া এভাবে চলে যায়, মিতিয়ার কাছে বিষয়টি খুব লজ্জাজনক মনে হয়। যদিও কাতিয়া তার সঙ্গে নরম ও ভদ্র আচরণ করে, কিন্তু সে সবসময় দেরি করে আসে। আর আসার একটু পরেই চলে যায়। যাবার অজুহাত হিসেবে বলতে থাকে, মাকে সঙ্গে নিয়ে দর্জির কাছে যাবে। আরো বলতে থাকে, তুমিতো জানো মেয়েরা মুগ্ধ হওয়ার জন্য পোশাক পরে। বলতে বলতে তার চোখগুলো বিস্ময়ে, আনন্দে জ্বলজ্বল করতে থাকে। সে জানে মিতিয়া তাকে বিশ্বাস করছে না, এবং কাতিয়া কথা বললেই সে ভাবে মিথ্যে বলছে, তবুও কাতিয়া কথা বলে যায়। কারণ তাদের ভেতর যে আন্তরিক কথাবার্তা ফুরিয়ে গেছে, কাতিয়া তা ঠিক বুঝতে পারে।
এখন সে তার মাথা থেকে টুপি একেবারেই খুলে রাখে না, ছাতা হাতে রাখে। মিতিয়ার বিছানার একেবারে শেষপ্রান্তে বসে মিতিয়াকে পাগল করে দেবার জন্য তার সিল্ক কাপড়ে ঢাকা পা দুটোকে মিতিয়ার দিকে উন্মুক্ত করে রাখে। চলে যাবার সময় আবার বলতে থাকে যে, সে কিন্তু সন্ধ্যায় বাসায় থাকতে পারবে না, মাকে নিয়ে বাইরে যেতে হবে। কাতিয়া কিন্তু এখানেই থেমে থাকে না, সে মিতিয়াকে আরেকটু বোকা বানাবার জন্য, তার ফালতু কল্পনাগুলোকে নিয়ে মজা করার জন্য সে বিছানার কাছ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটু পর পর চুপিচুপি দরজার দিকে তাকিয়ে আর চেহারায় একটি কামার্তভাব নিয়ে, অতিরঞ্জিত নাটকীয়তায় কলকল করে বলে, ‘আমাকে চুমু খাও।’
কাতিয়া তার হাতগুলো দিয়ে মিতিয়ার গলা জড়িয়ে ধরল, ও খুব আলতোভাবে তার সুন্দর শরীরটাকে মিতিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে তাকে নরমভাবে জড়িয়ে ধরল। তারপর একটি গভীর চুম্বনের পর, সে তার জিভটিকে মিতিয়ার মুখের ভেতরে রেখে আদর করতে করতে মিতিয়ার শরীরের সঙ্গে মিশে যেতে চাইল, আর কামার্তস্বরে, কানে কানে বলতে লাগল, ‘না, তুমি আমাকে পাগল করে দাও!’
এই ধরনের গভীর চুম্বন মিতিয়াকে বিষণ্ন করে ফেলল। এই ধরনের চুমু খাওয়া কাতিয়া শিখল কোথায়! মিতিয়া ছিল পুরোপুরি অনভিজ্ঞ, এমনকি চুমু খাওয়ার ব্যাপারেওーমস্কোর প্রথম শীতকাল তার জন্য যে প্রথম ভালোবাসা নিয়ে এসেছিল তখন তারা এভাবে চুমু খায়নি। তবে এই ধরনের কামার্ত চুমু খাওয়া কাতিয়া কেমন করে শিখল! তার কাছে কাতিয়ার সবকিছুই অদ্ভুত মনে হতে লাগল।
অধ্যায় : ৫
এপ্রিলের শেষের দিকে মিতিয়া কিছু দিনের জন্য গ্রামে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। সে ও কাতিয়া সম্পর্কটি নিয়ে এত বেশি পরিমাণ ক্লান্ত ও অসহ্য হয়ে উঠেছিল যে, তাদের কাছে সম্পর্কটি অযৌক্তিক মনে হল; এ পর্যন্ত তাদের মধ্যে যা যা ঘটেছে, আর কাতিয়া যা কিছু করেছে তার ভিত্তিতে। একদিন কাতিয়া তাকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে মরিয়া হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, তুমি চলে যাও, যাও, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমাদের কিছুদিন দূরে থাকা উচিত যাতে আমাদের পরস্পরের প্রতি অনুভবের জায়গাটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি। আমার মা বলছিল, তুমি এতটাই রোগা হয়ে গেছ যে, সে নিশ্চিত তোমার যক্ষ্মা হয়েছে। আমি সত্যিই তোমার বিষয়ে খুবই ক্লান্ত!’
ফলে মিতিয়ার প্রস্থান নিশ্চিত হয়ে গেল। কিন্তু যে বিষয়টিতে সে আশ্চর্যবোধ করল তা হলো, যদিও সে শোকে ডুবে গিয়েছিল, তবুও তার মনে হচ্ছিল চলে যেতে পারলেই তার ভালো লাগবে। যতই সে চলে যাবার জন্য নিজের মনকে তৈরি করে নিচ্ছিল, প্রথম দেখা হওয়ার সময়ের সবকিছুই তার মনে পড়তে লাগল। কারণ এত কিছু সত্ত্বেও কাতিয়ার শারীরিক স্পর্শ তার ভেতরে সারাদিন-রাত ধরে আবেগের যে প্রাবল্য তৈরি করে, সে তখন ভালোবাসার শিখরে পৌঁছে যায় আবার কাতিয়ার সামান্য পরিবর্তন মুহূর্তেই তার আবেগময় পৃথিবীটাকে তছনছ করে দেয়।
কাতিয়া কিন্তু আবার খুব নরম ও ভালোবাসাময় হয়ে আছে। অথচ মিতিয়া তাকে অনুভব করছে তার ঈর্ষান্বিত স্বভাবের ভেতর দিয়ে। কাতিয়ার নরম ভালোবাসাময় স্বভাবটির উপর সে তার ভ্রান্ত ধারণাগুলো চাপিয়েই তাকে দেখছে। আবার সেইসঙ্গে রাত দুটো পর্যন্ত কাতিয়ার সঙ্গেই থাকতে চাইছে। প্রস্থানের সময়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের দুজনের মনে হলো অনেক কথা বলা বাকি রয়েছে, বিদায়ের মুহূর্ত যতই ঘনিয়ে আসতে লাগল পরস্পরের প্রতি অনুভবগুলো যেন তীব্র জোড়ালো হয়ে আসতে লাগল, আর এই বিচ্ছেদটাকে মনে হতে লাগল অদ্ভুত। কাতিয়া, যে কখনো কাঁদেনি, তার কান্না ও চোখের জল তাকে মিতিয়ার হৃদয়ের খুব কাছে নিয়ে গেল, আর মিতিয়ার মনকে আর্দ্র করে তুলল। মিতিয়ার মনে হতে লাগল, যা কিছু ঘটল তার জন্য সেই দায়ী।
কাতিয়ার মা গ্রীষ্মের পুরো সময়টা ক্রাইমিয়া নামে একটি চমৎকার জায়গায় কাটাবে জুন মাসের শুরু থেকেই, আর সঙ্গে কাতিয়াকেও নিয়ে যাবে। তারা সিদ্ধান্ত নিল, মিতিয়া এই সময়টা মিশকটে কাটাবে, কিছু টাকা-পয়সা জমা করবে, তারপর তারা সেখানে একত্রিত হবে।
মিতিয়া তার প্রস্থানের জন্য মস্কো গেল, ভেতরে ভেতরে অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে, কিন্তু নিজেকে ঠিক বুঝতে পারলো না। মদ খেয়ে সে ছিল সম্পূর্ণ অসুস্থ, আবার একইসঙ্গে কাতিয়ার সঙ্গে নতুনভাবে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় বন্যভাবে সুখী। কাতিয়ার তার প্রতি অনুরাগ, তার লাগেজের জন্য তাকে নিয়ে ফিতা কিনতে যাওয়া, সবকিছুতেই কাতিয়াকে মনে হচ্ছিল তার স্ত্রী, বা প্রণয়িনী,ーআর এই সবকিছুর মধ্যদিয়ে তাদের প্রথম ভালোবাসার দিনগুলো মিতিয়ার মনে ফিরে ফিরে আসছিল। আর তার চারপাশের প্রকৃতিও যেন একই সংবেদনে তাকে জড়িয়ে রাখলーঘরবাড়ি, রাস্তা, যারা পায়ে হাঁটছে, যারা শকটে যাচ্ছে, প্রকৃতির শুষ্কতা বসন্তে যেমন হয়, বৃষ্টি আর ধুলার গন্ধ, ছোটো রাস্তাগুলোর পাশের দেয়ালের পেছনের পপলার গাছের সারি, প্রত্যেকেই যেন বিচ্ছেদের যন্ত্রণাময় অনুভবের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল। আবার পাশাপাশি চারপাশের প্রকৃতিতে সেই প্রত্যাশার আনন্দটুকুও ছিল যে আসন্ন গ্রীষ্মে ক্রাইমিয়াতে যখন তাদের দেখা হবে, যেখানে কেউ তাদের বিরক্ত করবে না এবং সেখানে পরিপূর্ণ হবে প্রেমের সকল প্রতিশ্রুতি। যদিও মিতিয়া জানে না প্রেমের প্রতিশ্রুতি বলতে আসলে কী বোঝায়।
যেদিন সে মস্কো ত্যাগ করবে সেদিন প্রোটাসভ নামে একজন তার সাথে দেখা করতে এল। প্রোটাসভ তেমনই একজনーযে-সব যুবকেরা হাই স্কুল শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে, যারা একটু বিদ্রুপাত্মক ভঙ্গি দেখাতে পছন্দ করে, কিন্তু তারা আচরণ ও অভিজ্ঞতার দিক থেকে যথেষ্ট দয়ালু পূর্বসূরিদের মতো। মিতিয়া একটু নীরব ও গম্ভীর প্রকৃতির, তবু প্রোটাসভ কাতিয়ার সঙ্গে মিতিয়ার প্রেমের বিষয়ে সবটুকুই জানতো। সেই ছিল মিতিয়ার ঘনিষ্ঠ সাথি ও একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
যখন সে মিতিয়ার দিকে তাকাল, দেখল ট্রাঙ্ক বাঁধতে গিয়ে মিতিয়ার হাত কাঁপছে। প্রোটাসভ খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত মন ও প্রজ্ঞা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “হায় ঈশ্বর! তোমরা দুজনেই যে কী রকম ছেলেমানুষ! এই যে ইয়ং ওয়ারদার, তোমাকে বুঝতে হবে কাতিয়া তার নিজের স্বভাবমতো চলতে চাওয়া একজন মানুষ। তুমি তাকে বলে-কয়ে পরিবর্তন করতে পারবে না, এমনকি স্বয়ং পুলিশের প্রধান এসেও তাকে কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু তোমার যে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, যা তোমার সহজাত প্রবৃত্তি এবং যার কৃপায় তুমি বসবাস কর, এবং এভাবেই তুমি তোমার জীবনটাকে চালিয়ে যাচ্ছ, কিন্তু মনে রাখতে হবে একটা জায়গা পর্যন্ত এটি বৈধ। তোমার শরীরই হচ্ছে তোমার অস্তিত্বের মূল বিষয়, যা নিটশে সঠিকভাবে নির্দেশ করেছেন। তোমার যৌথ জীবনে চলতে গেলে তোমাকে বৈধতার পথটিতে বিশাল অবদান রেখেই চলতে হবে। প্রাণিজগতেও কিছু প্রাণী রয়েছে যারা ভালোবাসার জন্য নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেয়। প্রেম বা ভালোবাসা একেবারে উন্মাদ হয়ে যাবার বিষয় না। তুমি যদি নিজের দিকে একটু যত্ন নাও, তাহলে তোমার পরিণতি তেমন নাও হতে পারে। বিখ্যাত কবি জাঙ্কার স্মিথের একটি কথা আছে, ‘চলে যাওয়া গ্রীষ্মকাল আবার ফিরে আসে।’ এত ভাববার কী আছে! কাতিয়াই কি পৃথিবীতে একমাত্র নারী! তুমি যে আমার কথাগুলো নিতে পারছ না, এবং কাতিয়াই যে তোমার একমাত্র প্রেমিকা তা আমাকে বোঝানোর জন্য ছোটো ব্যাগটিকে তুমি জোর করে শ্বাসরোধ করছ। আমার অবিবেচনাপ্রসূত যে উপদেশ তা ক্ষমা করে এবার আমার দিকে একটু খেয়াল দাও। সেন্ট নিকোলাসসহ আরো বড় বড় পয়গম্বর যারা আছেন, তারা যেন তোমাকে একটু আশীর্বাদ করে।”
প্রোটাসভ মিতিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে যাবার পর, মিতিয়া যখন তার বালিশের ফিতা বাঁধছিল, এবং ট্রাভেল ব্যাগ বাঁধছিল, তখন তার জানালার বিপরীত দিকে যে গায়কটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেওয়াজ করে যায়, সে একটি গান গাইছিল। সে গাইছিল ‘সুলতানের কন্যার’ গানটি যে তার বাগানে জ্বলজ্বলে সৌন্দর্য নিয়ে ঘুরে বেড়াত। মিতিয়া তার ফিতাগুলো শক্ত করে বাঁধল, টুপিটা নিল এবং কাতিয়ার মায়ের কাছে বিদায় নিতে গেল। চারপাশের বাতাস আর ওই গানটির কথা ও সুর মিলেমিশে মিতিয়ার মনের মধ্যে এমন একটি বাতাবরণ তৈরি করল যে, সে চারপাশে কে যাচ্ছে, কোন রাস্তায় যাচ্ছে সে কিছুই স্থির করতে পারছিল না। গানটির রোমান্টিক চেতনা তাকে এতটাই অস্থির করে ফেলল যা দু-দিন আগেও এতটা ছিল না। তার মন আবার ওই গানটির চিত্রকল্পের ভেতর দোদুল্যমান হতে লাগল যেখানে বাগানের ভেতর সুলতানের কন্যা দেখা করতে এসেছে, ঝরনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিগ্রো ক্রিতদাসটির সঙ্গে যাকে মৃত্যুর চেয়েও মলিন দেখাচ্ছে। সুলতানের কন্যা তাকে জিগ্যেস করছে, ‘তুমি কে! কোথা থেকে এসেছ!’ সে তখন কণ্ঠকে খুব নরম করে, শোক ও সরলতার সাথে জবাব দিচ্ছে, ‘আমার নাম মাহমেট।’ তারপর যুগপৎ পরমানন্দ ও বিষাদ তার চেহারায় মূর্ত হয়ে উঠল, এবং সে বলল, ‘আমি দরিদ্র আজরি গোত্রের একজন/যেখানে প্রেম যদি করো, তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত তৈরি থাকো।’
কাতিয়া তাকে বিদায় দিতে স্টেশনে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তার রুম থেকেーযে রুমে মিতিয়া তার সাথে অনেক অবিস্মরণীয় সময় কাটিয়েছে, সেখান থেকে সে বলল, ট্রেনের প্রথম বেলটা বাজার আগেই সে পৌঁছে যাবে। লাল চুলের দয়ালু মহিলাটি তখন একাকী বসে সিগারেট টানছিল। খুব বিষণ্ন দৃষ্টিতে তাকাল মিতিয়ার দিকে, সম্ভবত সে অনেক আগে থেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিল তাদের প্রেমটা কতটুকু কী হতে পারে। মিতিয়ার গাল লাল হয়ে উঠেছিল আর ভেতরে ভেতরে সে অস্থির ছিল। নিয়মমতো সে তার মাথা ঝুঁকিয়ে কাতিয়ার মায়ের নরম ও উষ্ণ হাতে চুমু খেল, এবং তিনি তার মাতৃসুলভ ভালোবাসায় মিতিয়ার কপালে কয়েকটি চুমু খেলেন, তারপর তার শরীরে ক্রস চিহ্ন আঁকলেন। মুখে হাসি টেনে গ্রিবইডফের (রাশিয়ার বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক) কথাকে অনুসরণ করে বললেন, ‘শোনো মিতিয়া, হাসতে শেখো! খ্রিষ্ট তোমার সঙ্গে আছে। যাও, তবে যাও।’
বিদায় নেয়ার সময় সে কীভাবে বেরিয়ে এল তা তার মনে পড়ে না, বেরিয়ে সে আসেনি, যেন পালিয়ে এসেছে। সে যেন হোঁচট খেয়ে পড়তে যাচ্ছিল, তারপর বিষয়টাকে সামলে নেয়ার জন্য সে ক্রুদ্ধ, দৃঢ় ও রাগান্বিত পদক্ষেপ দিয়ে সিঁড়ির দিকে এগুলো। চলবে