Homeঅর্থনীতিব্যাংক হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত

ব্যাংক হতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত


লুটপাট ও অনিয়মের মাধ্যমে দেশের ব্যাংক খাত দুর্বল করেছে শক্তিশালী একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। এক-দুই বছর নয়, বিগত কয়েক দশক রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লুটপাট চলেছে ব্যাংকগুলোয়। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সামনের দিনে ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার সুপারিশ করেছে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্স।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের নেতৃত্বে গঠিত এই টাস্কফোর্স গত ৩১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে। প্রতিবেদনে উন্নয়ন কৌশল পুনর্গঠন, আর্থিক ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর খুঁজে বের করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য ৩১টি সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থার চিত্রের পাশাপাশি পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ত্রুটি, দুর্নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে আটটি মেগা প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি এবং কৃষি, শিক্ষা খাতসহ অর্থনীতির সার্বিক চিত্রের বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিগত সরকারের সময় ব্যাংক খাতের লুট হওয়া অর্থ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেত। সুবিধাভোগী শক্তির হাত থেকে ব্যাংক খাতকে বাঁচাতে প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, ব্যাংক খাত থেকে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। একক ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীকে একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যাগরিষ্ঠ মালিকানা দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক কারণে কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া উচিত হবে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধনের জন্য সরকারি তহবিলের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এ ছাড়া আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষার জন্য সমস্যাগ্রস্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য একটি এক্সিট পলিসি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর বা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি উল্লেখ করে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সাইবার হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৬৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন ৮০ বার পেছানো হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রসারে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংক খাত চলে গেছে নিয়মনীতির বাইরে। এই সময়ে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় ধরনের কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা অর্থ লোপাট হয়েছে। এ ছাড়াও এ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমানোর সুপারিশও করা হয়। এতে বলা হয়, সীমিত শিক্ষা বাজেটের সঠিক ব্যবহার, সম্পদ ভাগাভাগির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভালো অবস্থান নিশ্চিতে সরকারের উচিত কিছু পাবলিক ও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একীভূত করার বিষয়টি বিবেচনা করা।

উন্নয়ন কর্মসূচির নামে দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ৮ মেগা প্রকল্পের ব্যয় বাজেটের চেয়ে ৬৮ শতাংশ বা ৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। এই প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ত্রুটি ছিল। এ ছাড়া দুর্নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব দেখিয়ে এই ব্যয় বাড়িয়েছে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে এক যুগ ধরে প্রতিবছর গড়ে ২ শতাংশ হারে শ্রমশক্তি বেড়েছে। বিপরীতে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ থেকে ৭ শতাংশ। কিন্তু প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তরুণদের কর্মসংস্থানের অবস্থা খারাপ হয়েছে।

বিবিএসের সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। তবে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার আরও বেশি, ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। দেশে মোট বেকার জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৯ শতাংশই এ বয়সের। আর তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাঁরা উচ্চশিক্ষিত, তাঁদের বড় অংশই বেকারত্বে ভুগছেন। কৃষকের সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন প্রযুক্তি ও উন্নত বীজের ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন ৪০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

এ ছাড়া টাস্কফোর্সের ৫৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে চাঁদাবাজি বন্ধে আলাদা দল গঠনের সুপারিশ; স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সুপারিশ; রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করা; তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি; নিত্যপণ্যের মজুত বাড়ানোসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নানা সুপারিশ করা হয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত