বর্ষানুরাগ
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড নিদাঘে
যখন ফেটে বিদীর্ণ হয় ধান ক্ষেতের বুক
তখন ধানক্ষেত যেনো চাতক পাখি
করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, আকাশের ঐ নীলিমায়
আশায় বাঁধে বুক, এবার তুমি আসবে
তৃষ্ণার্ত শিশুটির কাছে, মায়ের মতো।
না, তুমি যেনো ছুটে চলেছ দূর দিগন্ত মাঝে
যেমন ছুটে পালায় আশ্রিত পেত্নী
যাদুকরের মন্ত্রের ভয়ে।
অবশেষে এলে, সময়ে না আসার বেদনাতুর মন নিয়ে
তৃষিত ধরিত্রীর তৃষ্ণা মিটাতে
মন্থন করে জীর্ণতা-শীর্ণতা পঙ্কিলতা বিশ্বের
বয়ে আন শুভ্রতা ও কোমলতার পরশ
মিটাও আশা মনের
তাইতো হয় আমার বর্ষানুরাগ
থাকি সাল-ভর প্রতীক্ষায়।
টিনের চালে তোমার শ্রাবণ ধারায় বেজে উঠে কাজরি
তোমার পরশে সদ্য ফোটা কদম উন্মুক্ত করে তার কাঁচুয়া
বিল-ঝিল ফিরে পায় ভরা যৌবন
ধান্য ক্ষেত সিঞ্জিত হয় নরম শীতল পরশে
জাল-বড়শি ফেলে হয় মৎস্য শিকার
পল্লি দামাল ছেলেরা ধাপিয়ে পড়ে বিলের পানিতে
এ যেন জিয়ন-কাঠির স্পর্শ
কলার ভেলা ভাসিয়ে চলে
স্বস্তির সন্তরণ।
শাওন দিনের স্মৃতি যেনো শ্রব্য কাব্য-উজ্জ্বল, হয়নি সারা
অনুভবে কল্পনায় শ্রাবণ দিনের স্মৃতিগুলো
দিচ্ছে সাড়া, হে বর্ষা।
বসন্ত এসে গেছে
কুয়াশার ঘনঘটা নেই
দেহে অবমুক্ত হচ্ছে শীতবস্ত্রের আবরণ
উপভোগ্য রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল
জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে।
নগ্ন বৃক্ষে সবুজ পত্র-পল্লবের আনাগোনা
জীর্ণতা-পুরাতনকে মুছে ফেলে,
নতুনত্বের উন্মেষ
জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে।
পলাশ ফুল আগুন ঝরায়
বৃক্ষের শাখে শাখে
শিমুলও বসে আছে রক্তিম লালে রঙিন হয়ে
জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে
দক্ষিণে প্রেম-স্নিগ্ধ বায়ুর প্রবাহ
বাহারি রঙের ফলের সমারোহ
কোকিলের আনাগোনা, শ্রুতিমধুর কুহু কুহু
ধ্বনি প্রতিধ্বনির ছড়াছড়ি
জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে।