Homeরাজনীতিমধ্যম পন্থার নতুন দলে প্রতীকে এগিয়ে ইলিশ

মধ্যম পন্থার নতুন দলে প্রতীকে এগিয়ে ইলিশ


গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতা নতুন দল গঠন করতে যাচ্ছে। এ নিয়ে আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনসহ দেশের সবখানে। উদ্যোক্তারা বলছেন, সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের শেষার্ধেই আত্মপ্রকাশ করবে নতুন দল। নাম-প্রতীক এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নাম যা-ই হোক, দলটির আদর্শ হবে ‘মধ্যম পন্থা’। চূড়ান্ত ডান বা বাম—কোনো দিকেই থাকতে চান না তাঁরা। আর দলের প্রতীক হিসেবে আলোচনায় এগিয়ে আছে জাতীয় মাছ ‘ইলিশ’।

নতুন দল গঠনের এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে অভ্যুত্থানের পরে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটি। কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তরুণদের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারির শেষার্ধেই এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে এবং আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে।’

নতুন দলের আদর্শ সম্পর্কে জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা একটা মধ্যমপন্থী মতাদর্শের মাধ্যমে দলকে পরিচালনা করব। না ডানপন্থা, না বামপন্থা। মধ্যম পন্থায় থেকেই দলের আদর্শিক মাপকাঠি নির্ধারণ করব।’

দল গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র বলছে, আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই দলের যাত্রা শুরু হবে। ওই কমিটির আহ্বায়ক কে হবেন, তা ঠিক না হলেও সবার মতামতের ভিত্তিতে সদস্যসচিব হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর জাতীয় নাগরিক কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেনের মধ্য থেকে কেউ একজন আহ্বায়ক হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে। এ ছাড়া সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কেউ নতুন দলের কমিটিতে যুক্ত হলে পদত্যাগ করবেন কি না, সেটা নিয়েও চলছে কথাবার্তা। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জাতীয় নাগরিক কমিটি।

তবে জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, জনগণ চায়, সরকারে থাকা তরুণ উপদেষ্টারা নতুন দলে যোগ দেবেন। সে ক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের কেউ যদি দলে যোগ দিতে চান, তাহলে অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করেই রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে হবে বলে জানান আখতার হোসেন।

এর আগে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিংস পার্টি বলে একটা কথা উঠছে। আমি মনে করি, এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। অর্থাৎ সরকারের কোনো সাহায্য না নিয়ে তারা যদি দল গঠন করতে চায়, সেটা তাদের জন্যই ভালো হবে।’

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম অবশ্য গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলাম, যে নতুন রাজনৈতিক দল হোক বা অন্য কোনো দল হলেও আমরা সরকারে থাকা অবস্থায় সেটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হব না। কিন্তু এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আমি বা আসিফ (আসিফ মাহমুদ) কেউই এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। সরকার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।’

এদিকে নতুন দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সদস্য। তাঁরা বলছেন, অনেক নাম প্রস্তাব করা হলেও এখনো নাম ঠিক করা হয়নি। তবে দলীয় প্রতীক ইলিশ রাখার জন্য জাতীয় নাগরিক কমিটির কাছে একাধিক প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি সংগঠনটির নীতিনির্ধারণী ফোরামেও আলোচনা হয়েছে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। একই সঙ্গে ভূরাজনীতিতে ইলিশ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তাই এটি প্রতীক হিসেবে এখনো এগিয়ে আছে।

আখতার হোসেন এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রতীক নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা জানতে চাচ্ছি, মানুষ কোন প্রতীকটা পছন্দ করে।’

এদিকে নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে মানুষের প্রত্যাশা কী, সে বিষয়ে জানতে দেশব্যাপী মতামত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ স্লোগানে পাঁচটি প্রশ্নের মতামত মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। প্রশ্নগুলো হলো—আপনার মতে কোন তিনটা কাজ করলে দেশ বদলে যাবে; নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে আপনার জীবনের কোন সমস্যার সমাধান চান; নতুন দলের কাছে আপনি কী প্রত্যাশা করেন; দলের নাম কী হতে পারে; দলের মার্কা কী হতে পারে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থান যে হয়েছিল, সেটা কিসের ভিত্তিতে হয়েছিল, মানুষের চাওয়া-পাওয়াটা কী এবং তারা আমাদের কাছে কী আশা-আকাঙ্ক্ষা করে, সেটা জানার জন্য লিখিত মতামত নেওয়া হবে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মনোভাব জানা ও বোঝার চেষ্টা করছি।

দলে কারা জায়গা পাবেন, সে ব্যাপারেও বলছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান শক্ত। যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিল; বিশেষত মানুষ খুন, চাঁদাবাজি-রাহাজানি এবং গণহত্যার সঙ্গে জড়িতরা আমাদের দলে স্থান পাবে না। অন্য যে দলগুলো রয়েছে, সেখান থেকে যে কেউ আসতেই পারেন। বিএনপি-জামায়াত বা বামপন্থী দলগুলোর অনেকে আমাদের দলে আসতে পারেন।

নতুন দল গঠন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, তরুণেরা যে দল গঠন করছে, দেশ গঠনের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটলে এবং দলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য প্রতিফলিত হলে সেটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা যায়। তারা সুস্থ রাজনীতি করতে পারলে দলীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত