Homeদেশের গণমাধ্যমেরাত পোহালেই বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

রাত পোহালেই বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা


‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য ধারণ করে ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) থেকে শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে প্রাণের বইমেলা। এবার সবচেয়ে বড় বইমেলা আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলা একাডেমি। ইতোমধ্যে প্রস্তুত মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলো।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে লেখক-প্রকাশকদের কাছে এবারের বইমেলা কিছুটা ভিন্ন। তাই মেলার মাসজুড়ে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, এখনও শতভাগ স্টল নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি। পুরোদমে চলছে স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ, আনসার-র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি মেলা প্রাঙ্গণে লক্ষ করা যায়।

বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় এবারের বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস।

মেলার সার্বিক বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বলেন, আমরা আশা করি সব সম্ভাবনায় আলোকিত হবে আমাদের প্রাণের বইমেলা। ভাষাশহীদ, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেই শুরু হবে এবারের বইমেলা।

রাত পোহালেই বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা বইমেলায় থাকছে কঠোর নিরাপত্তার বেষ্টনী

এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। বাংলা ট্রিবিউনকে একাডেমি জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে এবারের বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়াও মেলার এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিরাপত্তার স্বার্থে মেলার প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণ এবং প্রতিদিন মশক নিধনের ব্যবস্থা থাকবে।

রাত পোহালেই বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা গতবারের আদলেই বইমেলার বিন্যাস

জানা যায়, এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে, তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহিরপথ এবার একটু সরিয়ে মন্দিরগেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে।

টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকবে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। খাবারের স্টলগুলোকে এবার বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।

‘শিশু চত্বর মন্দিরগেটে প্রবেশের ঠিক ডানদিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।’

রাত পোহালেই বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা বইমেলার সময়সূচি ও স্টল সংক্রান্ত তথ্য

১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত)। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

১. এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৭০৮টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি। মোট ইউনিট ১০৮৪টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ১৯৪৬টি)।

২. এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি (গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি)।

৩. লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

৪. শিশু চত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ১০৯টি)।

রাত পোহালেই বইমেলা, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা লেখক-প্রকাশকদের পুরস্কৃত করবে বাংলা একাডেমি

বইমেলা পরিচালনা কমিটি-২০২৫ সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।

এছাড়া ২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এবারের বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি ও পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বইমেলা নিয়ে লেখক-প্রকাশকদের প্রত্যাশা

এবারের বইমেলা নিয়ে তরুণ লেখকদের প্রত্যাশার জায়গাটা তুলনামূলক একটু বেশি। তরুণ লেখক মিলন আবদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বইমেলা সবসময় লেখক-পাঠকদের মাঝে অন্যরকম একটা সম্পর্ক তৈরি করে। দীর্ঘ একটা সময় পর সরকারের পটপরিবর্তন। এবার কিছুটা ভিন্নতা দেখবো হয়তো। তবে আমার বিশ্বাস সবার উপস্থিতিতে এবারও জমজমাট বইমেলা হবে। নতুন নতুন গল্প পড়তে পারবো, এটা বেশি আনন্দের হবে।

মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় পুথিনিলয়ের প্রকাশক শ্যামল পালের সঙ্গে। পূর্বের প্রেক্ষাপট এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে নানান কথা বলেন তিনি। বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা যদি আমরা প্রথম থেকেই চিন্তা করি তাহলে জনমনে প্রশান্তি আসবে। বিগত সময়ের তুলনায় এবারের বইমেলা নিয়ে সবার আগ্রহের জায়গাটা একটু বেশি। আমার প্রত্যাশা বাংলা একাডেমি সুন্দর একটা বইমেলা উপহার দেবে।

এবারের বইমেলা সম্পর্কে ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৫’ পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন বলেন, পুরো জাতি এখন একটা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় আছে। জাতি চায় একটি মুক্ত বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, সুন্দর বাংলাদেশ। বইমেলা এবার সেই সুন্দর বাংলাদেশের কথা বলবে। আমরা যদি একটি ভালো বাংলাদেশ চাই, ভালো বইয়ের কাছে আমাদের ফিরতে হবে। এবারের বইমেলা বিশেষ মুহূর্তে সেই বার্তা নিয়ে এসেছে।

দূষণ রোধে এবার হবে পলিথিনমুক্ত বইমেলা

দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই পরিবেশ দূষণ রোধে পলিথিনের ব্যবহার রোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই লক্ষ্যে এবারের অমর একুশে বইমেলার আয়োজনকে পরিবেশ সুরক্ষা-সচেতন এবং জিরো ওয়েস্ট বইমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এবার বইমেলার আয়োজনস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিতব্য সব স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্টফুড, কফি শপ, খাবার দোকান ইত্যাদি প্রস্তুতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন- পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদির ব্যবহার করার জন্য বলেছেন মেলা পরিচালনা কমিটি।

মেলা পরিচালনা কমিটির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবারের স্টল প্যাভিলিয়নের কর্ণধাররা। পরিবেশ সুরক্ষায় এমন উদ্বেগ প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন তরুণ লেখক তানজিম আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের সবার উচিত মেলা কমিটির উদ্যোগকে সহযোগিতা করা। কারণ দিনশেষে এটি আমাদের জন্যই কল্যাণকর হবে। এবারের বইমেলাকে সুন্দর করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে এটি সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত