বিশেষ এক ধরনের ইস্পাত, বিলাসবহুল মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকসহ মোট ২০টি পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে ভারত। এসব পণ্যের বেশির ভাগই উচ্চমূল্যের এবং এগুলোর ওপর শুল্কের হারও তুলনামূলক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সে কথা একাধিকবার উল্লেখ করে ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে।
সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা উচ্চমূল্যের পণ্যগুলোর ওপর থেকে শুল্ক কমাতে পারে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেট ঘোষণার সময় এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন ভারতীয় শিল্প খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা হচ্ছে, তা হলো নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রিয় মিত্র ট্রাম্পের দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর হঠাৎ কেন শুল্ক হ্রাস করবে ভারত!
মূলত, এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য। সম্প্রতি, ট্রাম্প রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে এক আলোচনায় ভারত, চীন এবং ব্রাজিলকে ‘অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকারী দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আর এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না… সবার আগে আমরা আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন, ভারত এবং ব্রাজিল আমাদের বিরুদ্ধে কঠোর শুল্ক আরোপ করছে। আমরা আর সহ্য করব না। আমরাও পাল্টা ব্যবস্থা নেব।’
ট্রাম্প ইতিমধ্যেই বাণিজ্যে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতির কথা বলেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি তারা আমাদের ওপর ১০ সেন্ট বা ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তবে আমরাও তাদের ওপর একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করব।’ তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, চীন সবচেয়ে কঠোর শুল্কনীতি অনুসরণ করছে। তবে ভারত এবং ব্রাজিলও কম নয়।
এদিকে ট্রাম্প যখন এমন মন্তব্য করেছেন, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা ভাবছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত সোমবার দুই নেতার ফোনালাপের পর ফ্লোরিডায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্যে আমেরিকার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে শুল্ককে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা করছেন। তাঁর যুক্তি, ‘যখন অন্য দেশগুলোর ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে, তখন আমেরিকান কর্মীদের ওপর করের বোঝা কমবে এবং দেশীয় কারখানাগুলো পুনরায় সচল হবে।’
এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ককে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করছে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো কলম্বিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানালে ট্রাম্প প্রশাসন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার হুমকি দেয়। এই সিদ্ধান্ত কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোকে পিছু হটতে বাধ্য করে।
এদিকে ভারত যদি কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের শুল্ক হ্রাস করে, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। তবে ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা এই পরিবর্তন এমনভাবে আনতে চাইছেন যাতে দেশীয় শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।