এই আয়োজনে বাধাদানকারীদের একজন তিলকপুর মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের বাজারে এটা করা যাবে না। আন্তর্জাতিকভাবে স্টেডিয়ামে খেলা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু এই ছোট বাজারে এই জিনিস নিয়ে এসে অশ্লীল পরিবেশ সৃষ্টি করা যাবে না। এলাকার মুসল্লিরা এক মাস ধরেই এর বিরোধিতা করে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে আসছে। ২৫ ডিসেম্বরেও তাদের কর্মসূচি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার হঠাৎ আবার যখন খেলার ঘোষণা আসে, তখন মাদ্রাসাগুলোর হুজুররাসহ দলমত নির্বিশেষে সবাই সমবেত হন। আমরা টিনে ঘেরা এই জায়গায় এ ধরনের কাজ যেন না হয়, সে কারণে টিনগুলো খুলে মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ ভিডিওতে টিন খোলা না, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ভেঙে ফেলছে দেখা গেছে- জানানো হলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণ যখন এক হয়ে কোনও কাজে যায়, তখন পুরোটা আয়ত্তে থাকে না।’
তিন মাস ধরে চলা টুর্নামেন্টে কেবল মেয়েদের খেলার দিনই কেন অশ্লীলতা হবে প্রশ্ন তুলে আয়োজক কমিটির সভাপতি ও থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সামিউল হাসান বলেন, ‘এই খেলা নভেম্বরের ২ তারিখ থেকে চলছে। জেলা পর্যায়ের টুর্নামেন্ট। সবাই সময় দিতে পারে না বলে সপ্তাহে একটা-দুইটা খেলা হয়। গত ডিসেম্বরের ২৬ তারিখ মেয়েদের খেলাটা হওয়ার কথা ছিল। সে সময় বিরোধিতা করেছে। খেলা বন্ধ করে দিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আবারও তারিখ দিয়েছি। ২৯ জানুয়ারি খেলা হওয়ার কথা। ২৮ তারিখ একটা বিশেষ মহল মাঠে ভাঙচুর চালায়।’ এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) প্রশাসনের সঙ্গে দুইপক্ষের বসার কথা ছিল কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘খেলাই বন্ধ হয়ে গেছে, আর বসে কী হবে।’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশজুড়ে আরও বেশি বেশি মেয়েদের খেলার আয়োজন করতে হবে। আরও বেশি বেশি বাউলসহ বিভিন্ন ঘরানার গানের/নাচের/পালার/নাটকের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। বেশি বেশি মেলার আয়োজন করতে হবে। গলার আওয়াজ বাড়াতে হবে।’
আমরা তো আওয়াজ তুলবোই, পাশাপাশি সরকারের আওয়াজও লাগবে উল্লেখ করে ‘উই ক্যান’ সংগঠনের সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, ‘আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পেছনের দিকে যাওয়ার সুযোগ নাই। যেখানে আছি সেখান থেকে সামনে যেতে হবে। স্কুলগুলোতে মেয়েদের ফুটবল খেলার সুযোগ অব্যাহত রাখতে হবে। ফিফা উইমেন ফুটবলের একটি কর্মসূচি ছিল। সরকার সেসময় স্কুলগুলোতে মেয়েদের ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করে দিতে চিঠিও দিয়েছিল। কলমাকান্দার মেয়েরা যে উঠে এসেছে, সেটি এমনি এমনি উঠে আসেনি। যে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সরকার যদি এর বিচার না করে, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যাবে। তাদের স্টেটমেন্টে যেতে হবে যে তারা নারীর খেলা চায়। সরকারের ভয়েস শুনতে চাই, সে বলুক। ফুটবল খেলতে দেবে না, দোকান উদ্বোধন করতে দেবেন না, নারী বলে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা পেতে হবে, এর বিরুদ্ধে সরকারের অফিসিয়াল বার্তা দিতে হবে। তারা যে এটার (ভাঙচুরের) পক্ষে না, সেটা জানান দিতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন আওয়াজ তুলে আসছি, সরকারের আওয়াজও শুনতে চাই।’