স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে অংশীজন পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে (এনআইএলজি) সভার আয়োজন করা হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং এনআইএলজি সভার আয়োজন করে।
পরামর্শ সভায় ৬০টিরও বেশি সংস্থা যৌথভাবে স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে তাদের মতামত দেয়।
সভায় সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী এবং কার্যকর করার প্রস্তাব তুলে ধরেন। স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের (এলজিআরসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্যরা বিশেষ অতিথি ছিলেন। সভায় অন্যদের মধ্যে সুইজারল্যান্ড দূতাবাস, সিডা, জাইকা এবং এনআইএলজি-এর প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
সভায় প্রফেসর তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সভার সুপারিশ ও পরামর্শগুলো ভবিষ্যতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আগামী নির্বাচিত সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত হবে। তরুণ প্রজন্মকে এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা অপরিহার্য, কারণ তারা ভবিষ্যতের নেতা এবং নীতিনির্ধারক।’
তিনি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার সময় সভায় উপস্থাপিত সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সূচনা বক্তব্যে ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজনীয়তা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এলজিআই) স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি সংস্কার প্রক্রিয়ায় নারীদের ক্ষমতায়নসহ স্থানীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেন। হাসিন জাহান একটি জনগণকেন্দ্রিক শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
অন্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং মানবাধিকার কর্মী ইলিরা দেওয়ান পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যথাসময়ে নির্বাচন না হওয়ার কারণে যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে তা তুলে ধরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতান্ত্রিক মর্যাদা বজায় রাখতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের অপর সদস্য ড. ফেরদৌস আরফিনা ওসমান স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন। কমিশনের সদস্য এবং নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন শেফালী মহিলাদের জন্য কোটা সিস্টেমের পরিবর্তে নেতৃত্বের পদে সরাসরি নির্বাচনের বিধান চালুর পক্ষে মত দেন।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশস্থ সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের নেক্সাস প্রোগ্রাম ম্যানেজার মিসেস আইরিন হফস্টেটার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ স্থানীয় সরকারে ক্ষমতায়নে সুইজারল্যান্ড-বাংলাদেশ সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা না গেলে জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়।’
সভার সভাপতি এনআইএলজির পরিচালক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন, জনগণের অন্তর্ভুক্তি এবং সেবার মান বৃদ্ধি নিশ্চিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর মি. পার্থ হেফাজ সেখ সভায় অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের সংস্কারের আলোচনা কমিশনের জন্য এ বিষয়ক নীতি সংক্রান্ত এজেন্ডা তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’