বিএনপি মহাসচিবের ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ দাবি মূলত আরেকটা ওয়ান-ইলেভেন সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা ওয়ান-ইলেভেনের সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকালে নাহিদ ইসলামের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেছেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
পোস্টে তিনি বলেন, ‘ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতা ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)। আমরা ৩ আগস্ট থেকেই বলে আসছি, আমরা কোনও সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেবো না। আমাদের বারবার ক্যান্টেনমেন্টে যেতে বলা হলেও সেখানে যেতে অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বলেন, ‘জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেক দিন স্থায়ী হবে, এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয়নি। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলছে সামনের নির্বাচনের পরে। ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ওয়ান-ইলেভেন সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে।
বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টু’র আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ নামে আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন সরকারের প্রস্তাবনা করছে বলেও অভিযোগ করেন উপদেষ্টা নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না এবং আমি মনে করি, এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।’
বর্তমান সরকার জাতীয় সরকার না হলেও এতে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানান সুবিধা ভোগ করছে বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এমনভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানান স্তরে বিএনপিপন্থি লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে।’
‘রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন’, ‘সংস্কার’, ‘নতুন সংবিধান’ ও ‘জুলাই ঘোষণা‘ সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, অথচ এগুলো কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনও দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই না যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনও পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবো।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারিনি; এত হত্যা ও অপরাধের পরেও। হায় এই ‘জাতীয় ঐক্য’ লইয়া আমরা কি রাষ্ট্র বানাবো! বাংলাদেশকে দুর্বল করা সহজ, কারণ বাংলাদেশকে সহজেই বিভাজিত করা যায়। দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না সমগ্র বিএনপি এই অবস্থান গ্রহণ করে। বরং বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চায়। বিএনপির দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে আহ্বান করবো, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির পথ বেছে নিন।’