মানুষ-মেছো বিড়ালের সংঘাতের ওপর প্রকাশিত সংবাদ সংগ্রহ করে সে সময় বাংলাদেশে মেছো বিড়ালের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। কাজটি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘স্টুডেন্ট কনফারেন্স অন কনজারভেশন সায়েন্স’-এ পুরস্কৃত হয়েছিল। তবে সে আনন্দ ছিল ক্ষণস্থায়ী। গবেষণায় মেছো বিড়ালদের জন্য ভালো কিছু খুঁজে পাইনি। ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত ৩৬১টি সংবাদ পর্যালোচনা করে ১৬০টি মৃত মেছো বিড়ালের খোঁজ পেলাম। সবই মনুষ্য সৃষ্ট কারণে। ৮৩ শতাংশ সংবাদ মেছো বিড়ালকে ভুল প্রাণী ভেবেছে। কোথাও বলা হয়েছে বাঘ, কোথাও চিতা বাঘ, কোথাও বাঘের বাচ্চা। সংঘাতগুলোর কারণ খুঁজতে গিয়ে একই চিত্র। ৪৬ শতাংশ সংবাদ বলছে, দেখামাত্রই মেছো বিড়ালদের ধাওয়া করা হয়েছে বা আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আর এত এত আহত আর মৃত মেছো বিড়ালের ছবি দেখাও স্নায়ুর জন্য কঠিনই ছিল। কিন্তু মানুষ কেন মেছো বিড়ালকে ভয় পাচ্ছে?
মেছো বিড়াল মূলত একটি ছোট প্রজাতির বিড়াল। ওজন ৫ থেকে ১৬ কেজি। দক্ষিণ এশিয়ার জলাভূমি অধ্যুষিত এলাকায় এরা প্রধানত বসবাস করে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় খুব কম পাওয়া যায়। বাসার বিড়াল পানি পছন্দ না করলেও মেছো বিড়াল তার জলজ অভ্যাস ও মাছ ধরার কৌশলের জন্য বিখ্যাত। পানিপ্রধান পরিবেশের জন্য অভিযোজিত। খাটো গড়নের মেছো বিড়ালদের লেজও ছোট, সাঁতারের সুবিধার জন্য ব্যাঙের পায়ের মতো তাদের পায়ের আঙুলের মাঝে পাতলা ত্বকের আংশিকভাবে সংযোগ আছে। এদের খাবার প্রধানত মাছ, জলাভূমির পাখি এবং অন্যান্য ছোট জলজ। শরীরের রঙে খড়-হলুদের মাঝে ছোট ছোট কালো কালো ছোপ। আর সেখানেই যত সমস্যা। মেছো বিড়াল দেখা গেলেই মনে করা হয় বাঘ বেরিয়েছে। না জেনে অনেকেই মেছো বাঘ ডাকেন, সে নামে ফেসবুকে পোস্ট হামেশাই চোখে পড়ে।