দেশের দুটি স্টক এক্সেচঞ্জে একই সময়ে লেনদেন হয়। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে লেনদেনের নতুন সময় নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এর ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ে আধা ঘণ্টা আগে লেনদেন হবে সিএসইতে। তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।
সম্প্রতি ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে চিঠি দিয়ে সিএসই বলেছে, আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে সিএসইতে সকাল ১০টার পরিবর্তে সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরু হবে। ডিবিএ বলছে, উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে পৃথক সময়ে একই শেয়ার লেনদেন হবে। এতে দামে কারসাজির সুযোগ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিএসইতে শুরু হলে পরে ঢাকায় যখন শুরু হবে, তখন দেখা যাবে যে, উভয় এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া একটি শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে সিএসইতে। এটা ক্যালকুলেটিভ ম্যানিপুলেশন। এটা যদি হয়, তাহলে এক ধরনের প্রাইস ডিসটরশন (বিকৃতি)।’
ডিবিএ সভাপতি বলেন, ‘দাম নির্ধারণের জায়গায় প্রাইস ডিসটরশনের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এটা তো পৃথিবীর কোথাও নেই। একই শেয়ারের লেনদেন দুইটা স্টক এক্সচেঞ্জে দুই সময়ে হচ্ছে, এটা যদি করেন, তাহলে উদ্দেশ্য তো ভালো নয়।’
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘একই শেয়ার, একই ব্রোকার, ফলে ভিন্ন সময়ে লেনদেন হওয়ার কারণে প্রাইস ডিসটরশন কেন হবে? বরং, আমার তো মনে হয় ডিসটরশনের সুযোগ কমে যাবে।’
সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘এক সপ্তাহে করে দেখা হোক। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
ডিবিএর সচিব মো. দিদারুল গনীর পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলা হয়, ‘ডিবিএর পক্ষ থেকে সিএসইর এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিদ্যমান সময়সূচি বহাল রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ডিবিএ বলছে, ‘কোনো একটি দেশে একই সময়ে একাধিক স্টক এক্সচেঞ্জে পৃথক লেনদেন সময়সূচি থাকার বিষয়টি নজিরবিহীন ও চিন্তাবহির্ভূত।’
ডিবিএ বলছে, ডিএসই ও সিএসই— উভয় এক্সচেঞ্জে একই সিকিউরিটিজ কেনাবেচা হয়। প্রতিদিন একই সময়ে একইসঙ্গে ট্রেডিং শুরু হওয়ার ফলে বিনিয়োগকারী উভয় এক্সচেঞ্জ যাচাই-বাছাই করে প্রতিযোগিতামূলক উপযুক্ত দরে চাহিদা মতো শেয়ার কেনাবেচা করে থাকেন।
ডিএসইর তুলনায় সিএসইর শেয়ার সংখ্যা ৫ শতাংশের মতো। সিএসইর অবস্থান বিবেচনা করলে শেয়ারের ভলিউমের স্বল্পতা এবং সব ব্রোকারের অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ার কারণে প্রারম্ভিক ট্রেডিংয়ে (প্রি-ওপেনিং) শেয়ার প্রাইস ডিসকভারি বাধাগ্রস্ত (ডিসটরটেড প্রাইস ডিসকাভারি) হবে।
উভয় এক্সচেঞ্জে পৃথক ট্রেডিং সময়সূচির কারণে দ্বৈত সদস্য কোম্পানিগুলোতে ট্রেডিং সেবা ও কার্যক্রম ব্যাহত হবে। হাউসগুলোতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়ে বাজার ও বিনিয়োগকারীর আস্থায় এবং সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ডিবিএর প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের বাজারে বিনিয়োগকারীর অনাস্থার কারণে মন্দা বিরাজ করছে। দীর্ঘ এ মন্দার ফলে বিনিয়োগকারীসহ বাজার অংশীজন ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থে সিএসইর নতুন ট্রেডিং সময়সূচির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে বিদ্যমান সময়ে সকাল ১০টায় বহাল রাখার জন্য সিএসই পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় চিঠিতে।