Homeজাতীয়রুমির মতে শান্তি কি?

রুমির মতে শান্তি কি?


হযরত মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ) ইতিহাসের সর্ব শ্রেষ্ঠ আলেম ও সুফি-দার্শনিক।তিনি শান্তিকে মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে শান্তি কেবল বাহ্যিক পরিবেশের কারণে নয়, এটি মানুষের অন্তর থেকে উৎসারিত হওয়া একটি অভ্যন্তরীণ অবস্থা। 

মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি আত্মার গভীর শান্তি,আল্লাহর সাথে একাত্মতা এবং মানসিক প্রশান্তির একটি চিত্র হিসেবে দেখেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ,শান্তি মানুষকে তার আসল আত্মার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। 

তিনি শান্তিকে তিনটি প্রধান দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন- আধ্যাত্বিক,দার্শনিক বৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক।

১. আধ্যাত্মিক দিক থেকে শান্তি (Spiritual Perspective)

রুমির মতে, শান্তি হলো সেই অবস্থা যখন আত্মা আল্লাহর সাথে একাত্ম হয়ে যায় এবং সমস্ত বাহ্যিক শঙ্কা, উদ্বেগ এবং দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হয়। তিনি বলেন:”শান্তি হল সেই অগ্নি, যা আমাদের হৃদয়কে পুর্ণ করে, যখন আমরা আমাদের সমস্ত দুঃখ ও কষ্ট ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি।”

মূল ভাবনা:শান্তি আসলে আল্লাহর প্রতি প্রেম এবং আত্মসমর্পণের ফলস্বরূপ।আত্মার অস্থিরতা শান্তি দ্বারা শান্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছায়।শান্তির প্রকৃত অর্থ হলো বাহ্যিক পরিস্থিতি থেকে নির্ভরশীল না হয়ে আধ্যাত্মিক সত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়া।

উদাহরণ:

একজন সুফি দরবেশ যখন নিজের ভোগ-বিলাসিতা ত্যাগ করেন এবং শুধুমাত্র আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করেন, তখন তার অন্তরে শান্তি সৃষ্টি হয়। তার সমস্ত চিন্তা এবং অনুভূতি ঈশ্বরের প্রতি নিবেদিত থাকে, যা তাকে প্রকৃত শান্তির অভিজ্ঞতা দেয়।

২. দার্শনিক দিক থেকে শান্তি (Philosophical Perspective)

দার্শনিকভাবে, রুমি শান্তিকে জীবনের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে দেখেন। তিনি মনে করেন, শান্তি কেবল বাহ্যিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল নয়, এটি মানুষের মনের গভীরে নিহিত। শান্তি হলো আত্মবিশ্বাস, আত্মজ্ঞান এবং সমস্ত দ্বন্দ্বের মধ্যে অন্তরের ঐক্য।

“যতক্ষণ না তুমি নিজের মনের ভিতর শান্তি খুঁজে পাবে, ততক্ষণ তোমার বাহ্যিক পৃথিবী শান্তি পাবেনা।”

মূল ভাবনা:শান্তি হলো মানুষের মনের মধ্যকার সব দ্বন্দ্ব এবং বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি।এটি দার্শনিকভাবে উপলব্ধি করা যে, বাহ্যিক ঘটনাগুলোর জন্য আমাদের মন অস্থির থাকে, কিন্তু মনের শান্তি আমাদের জীবনকে নিরাময় করতে পারে।শান্তি হলো সেই অবস্থা, যেখানে আত্মবিশ্বাস এবং প্রশান্তি এক হয়ে যায়, এবং বাইরের দুনিয়া তার প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

উদাহরণ:

একজন মানুষের জীবনে বহু চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, কিন্তু যখন সে তার মন শান্ত করে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে, তখন তার ভিতর শান্তি আসে। এই শান্তি তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতি সে শান্তভাবে গ্রহণ করতে পারে।

৩. বৈজ্ঞানিক বা মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে শান্তি (Scientific/Psychological Perspective)

মনস্তাত্ত্বিকভাবে, শান্তি হলো এক ধরনের মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষের মস্তিষ্কে স্ট্রেস, উদ্বেগ এবং হতাশার মাত্রা কমে যায়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ধ্যান (Meditation), যোগব্যায়াম (Yoga) এবং আত্মবিশ্বাস মানুষের মস্তিষ্কের শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ:শান্তি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন ও ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা সুখ এবং প্রশান্তির অনুভূতি সৃষ্টি করে।

মনস্তাত্ত্বিক শান্তি মানে আমাদের চিন্তা এবং অনুভূতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা, যা জীবনকে আরও সহজ এবং শান্তিপূর্ণ করে তোলে।ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে শান্তি তৈরি হলে সামাজিক সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

রুমি বলেন:

 “যদি তুমি শান্তি চাও, তাহলে প্রথমে নিজের অন্তরকে শান্ত করো।”

উদাহরণ:

একজন মানুষ যখন ধ্যান বা যোগব্যায়াম করতে শুরু করেন, তখন তার মস্তিষ্কে চাপ কমতে শুরু করে এবং তার মধ্যে প্রশান্তি অনুভূত হয়। ধীরে ধীরে, তার মন অনেক শান্ত থাকে এবং বাইরের পৃথিবী তার ওপর কম প্রভাব ফেলতে পারে। তার ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়।

রুমির শান্তি সম্পর্কে মূল শিক্ষা (Core Teachings of Rumi on Peace)

১. আত্মবিশ্বাস: শান্তি আসে যখন আমরা নিজের আত্মবিশ্বাস এবং আত্মজ্ঞান অর্জন করি।

২. মনের শান্তি: শান্তি মানে বাহ্যিক বিশ্ব থেকে নির্ভরশীল না হয়ে নিজের মনের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা।

৩. ঈশ্বরের প্রতি প্রেম: আধ্যাত্মিক শান্তি ঈশ্বরের প্রতি প্রেম থেকে আসে।

৪. ভয়ের মুক্তি: শান্তি তখনই আসে যখন আমরা আমাদের ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি লাভ করি।

৫. প্রশান্তি: শান্তি মানবিক সম্পর্কের মধ্যে সহানুভূতি, সমঝোতা এবং প্রেম তৈরি করে।

রুমির বিখ্যাত বাণী:

“শান্তি হলো সেই ফুল, যা আপনার অন্তরে ফোটে যখন আপনি আপনার অহংকার ও দ্বন্দ্ব ত্যাগ করেন।”

রুমি বলেন: “শান্তি আসবে না, যদি না তুমি তোমার হৃদয়ে তার জন্য স্থান তৈরি করো।”





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত