চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা এবং কিরণগঞ্জ সীমান্তের মধ্যবর্তী এলাকায় বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের আমগাছের ডাল কাটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল শনিবার (১৮ জানুয়ারি)। পরে ওইদিন বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের পতাকা বৈঠকে এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিএসএফ। বৈঠকের পর থেকে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। চলছে বিজিবির নিয়মিত ও সতর্ক অবস্থায় টহল।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সীমান্ত এলাকা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া।
বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর বিরোধপূর্ণ এক হাজার ২০০ গজ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। একই সঙ্গে সীমান্তের ওপারে বিএসএফ সদস্যরাও নিয়মিত টহল দিচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক ফারুক ইসলাম বলেন, ‘সীমান্ত এলাকা এখন স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। কোনও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নেই।’
শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ সীমান্তের প্রান্তে বিএসএফ ও ভারতীয়রা ঢুকে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। পরে বিজিবি ও স্থানীয় সাধারণ জনগণ মিলে এই অপচেষ্টা রুখে দেয়। গতকাল বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের পতাকা বৈঠকের পর সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিজিবির সদস্যদের নিয়মিত টহল দিতে দেখছি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বর্তমানে সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আমাদের দৈনন্দিন সীমান্তের টহল কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে।’
এদিকে, শনিবার বিকালে বৈঠক শেষে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, বাংলাদেশিদের আম গাছ কাটা নিয়ে সীমান্তের দুই পাশের জনগণের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এই সময়ে বাংলাদেশি সাধারণ নাগরিকদের সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে না যেতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিএসএফ সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যাতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং বিষয়টি বিজিবির উচ্চপর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে।
‘ভারতীয় নাগরিকরা যে আম গাছ কেটে ফেলেছে, এজন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’
এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি চৌকা সীমান্তে আইন লঙ্ঘন করে বিএসএফের পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করলে বিজিবি বাধা দেয়। এতে সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এর দশ দিন যেতে না যেতেই সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক ও বিএসএফের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন তারা।
এ সময় ‘দিল্লি না ঢাকা?/ ঢাকা ঢাকা’, ‘দালালি না রাজপথ?/ রাজপথ রাজপথ’, ‘ভারতের আগ্রাসন/ ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন পাঁয়তারা করে চলেছে। তাই তারা আজ আমাদের বাংলাদেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করেছে। ভারত চায় না আমাদের দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে না থাকলে তাদের পাঁয়তারা শিক্ষার্থীরা নস্যাৎ করে দেবে।’
এ সময় রাবির ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. ইয়ামিন হোসাইন বলেন, ‘সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে রাবি শিক্ষার্থীরা সর্বদা আপসহীন। ভারতের যেকোনও ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের আপামর জনতা মেনে নেবে না। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারকে হাত করে ভারত বাংলাদেশের জমি-জায়গাসহ অনেক সম্পদ লুট করে নিয়েছে। বর্তমানে তা না করতে পেরে হামলা করছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী নাগরিকদের ওপর। যা খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা।’