সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি আবির আবরাজ। তার কবিতার বই ‘হাওয়া গুমসুম, ফুটো না কুসুম’।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?
আবির আবরাজ: এটা আসলে নির্দিষ্ট না। যেকোনো সময়, যেকোনো কিছু নিয়া কবিতা হইতে পারে। ওই আর্জটা আসা লাগে আরকি। আর আমি কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত হই ঠিক বলা যায় না। নেসেসিটিও ফিল করি না। একটা স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়া থাকি লেখালেখির ব্যাপারে। হইলে হইলো, না হইলে নাই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আবির আবরাজ: থিম ঠিক করে কবিতা লেখা আমার জন্য জটিল। অসম্ভবই বলা যায়। কবিতাটা লিখতে লিখতেই একটা থিম হইয়া উঠতেছে এই ব্যাপারটা এক্সপেরিয়েন্স করতে ভাল্লাগে আমার। থিম ঠিক করে, ছাঁচে ফেলে কবিতা লিখতে গেলে পরতে পরতে উষ্ঠা খাওয়ার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে এদিকে যাই না সহজে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?
আবির আবরাজ: ডিপেন্ডস। ধরা যাক, আইডিয়া একটা মাথায় আসছে। তখন মাথার মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথার মতো হয়। কিন্তু এইটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। ওই সময়ের মধ্যে লিখে ফেলতে পারলে ভালো, নাইলে এই আইডিয়া আর কোনোদিন আমারে ধরা দেবে না। তখন নতুন আইডিয়ার জন্য অপেক্ষা করা, এই আরকি। তবে, আইডিয়াটা যে তাৎক্ষণিক লেখামাত্র খুব ভালো কিছু হয়ে যায় নিজের কাছে, এমন না। হয়ত হয়, নইলে ফালায়ে রাখি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। এডিট টেডিট করি, মাঝেমধ্যে পড়ে দেখি। মজা লাগলে তো লাগলোই, না লাগলেও প্যারা নাই।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?
আবির আবরাজ: ভাষায় আমি স্বতঃস্ফূর্ত থাকতে চাই। যে ভাষায় বলি এবং চিন্তা করি সেটাই আমার কবিতার ভাষা। শৈলীর ক্ষেত্রেও তাই। জবরদস্তি থেকে দূরে থাকতে চাওয়াই আমার কবিতার শৈলী।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?
আবির আবরাজ: আজ পর্যন্ত যাদেরকে পড়ছি এবং পড়ে ভালো লাগছে তাদের সকলের প্রভাব আছে আমার মধ্যে। প্লেটো নাইলে ওর মতোই কোনো হনু মেবি একটা কথা বলছিলো যে, নতুন কিছুই নাই। সবকিছুই আদতে রি-জেনারেশন। আমি এইটা বিশ্বাস করি।
বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?
আবির আবরাজ: না, আমি কথাসাহিত্যের লোক নই। মানে লেখালেখির ক্ষেত্রে। তবে পড়ি তো অবশ্যই। পড়া লাগে। প্রভাবও আছে। মূলত যা-ই পড়ি কিংবা দেখি কিংবা বুঝি সবকিছুরই প্রভাব কোথাও না কোথাও থাইকা যায় চিন্তার ভেতরে। ওইগুলা পরে কবিতাতেও চইলা আসে। যেহেতু এই একটা ফর্মেই আমি লেনাদেনা করি, ফলে এইটা স্বাভাবিক। এছাড়া চিন্তা যেহেতু একটা প্র্যাক্টিস, তো আসে আরকি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
আবির আবরাজ: আমার প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বইটা বাইর হয় ২০২২ সালে। নাম: হাওয়া গুমসুম, ফুটো না কুসুম। ২০১৭ সাল থেকে লেখা শুরু করে ২২-এ এসে এর কবিতাগুলি লেখা শেষ হয়। তবে চিন্তাগুলির টাইমলাইন আরও দীর্ঘ। আমি বইটার শেষ কবিতা লেখার আগ পর্যন্ত যতদিন বেঁচে ছিলাম তার পুরাটাই আসলে এর টাইমলাইন। হতে পারে যতদিন বেঁচে থাকবো, তারও। ফলে বোঝাই যায়, এর সাথে আমার মোটামুটি আজীবনের বোঝাপড়া এবং যাপন একভাবে জড়িত। তবে আমি এই বইয়ের ঘাপলা থেকে বাইর হয়ে আসতে চাই। সতর্কতার সাথে পরের চিন্তাগুলিরে এর প্রভাবমুক্ত রাখতে চাই। আল্লাহ ভালো জানে পারবো কী না।
বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?
আবির আবরাজ: অবশ্যই ফেলে। কবিতার কাঁচামাল তো বিভিন্ন দিক থেকেই নেয়া লাগে। এগুলার থেকেই বেশি। যেমন জুলাই। আমার তো মনে হয়, যতদিন বাঁইচা থাকবো জুলাইয়ের থেকে আমি কিংবা আমার চিন্তাভাবনা বাইর হইতে পারবো না। কবিতা তো লিখবোই, ফলে সেখানেও থাকবে। সমকালের বাইরে দাঁড়ায়ে কবিতা লেখা টাফ। আমি সমকালে দাঁড়ায়েই অতীত ও ভবিষ্যৎটা মাপতে চাই।
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
আবির আবরাজ: এইটা ডিপেন্ড করে আমার মর্জির উপর। মাঝেমধ্যে আনে, বেশিরভাগ সময় আনে না। মন্তব্য নিয়া আমার প্যারা নাই। নেগেটিভ পজিটিভের বাইরে দাঁড়ায়ে আমি বরং এগুলা এঞ্জয় করি।
বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
আবির আবরাজ: ভবিষ্যতে আমি আমার কবিতাই লিখতে চাই। ধারা-টারা নিয়া মাথাব্যথা নাই। এতো সিলেবাস মাইনা কখনও লিখিও নাই, আমার পক্ষে লেখা সম্ভবও না। আমার জন্য আইডিয়াই সব। আমি বলা চলে আইডিয়ার গোলাম। প্রেজেন্টেশনটাও আইডিয়া দিয়াই ঠিক করতে চাই। তবে মনে হয় না আমি জীবদ্দশায় খুব বেশি লিখতে পারবো। যা-ই লিখবো, আশা করি নিজেকে কনভিন্স করতে পারবো। বাদবাকি পাঠকের মামলা। আমার কাজ গুলিটা ছুঁড়ে দেয়া, পরে যেখানে হিট করতে পারে, করবে।