পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আন্দোলনকারীরা। এই ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক’ উল্লেখ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি, জাতীয়তাবাদী সহায়ক কর্মজীবী পরিষদ ও সহায়ক কর্মচারী পেশাজীবী ফোরাম সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট পৃথক পৃথক আবেদনে জানায় যে, গত ২ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক পৌনে ১০টা থেকে কতিপয় শিক্ষার্থী ও অজ্ঞাত বহিরাগত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন তালাবদ্ধ করে ভবনে কর্তব্যরত উপ-উপাচার্যদ্বয় ও কোষাধ্যক্ষসহ প্রায় ২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটকে রাখে। তারা সেদিন রাত প্রায় পৌনে ১০টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকেন। সেসময় আবেগী ও বিব্রতকর অভিনয়ের মাধ্যমে ছড়ানো হয় প্রোপাগান্ডা, দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। ভেতরে আটকে থাকা অসুস্থ রোগী, নফল রোজাদার ও সন্তানসম্ভবা নারীসহ বেশকিছু মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়েন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সেদিনের সেই ঘটনাকে দুঃখজনক, আইনবহির্ভূত, অমানবিক ও ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি, প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও প্রশাসনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর এফ নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ঘটনার সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে যথাসম্ভব শিগগির প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর থেকেই আমরা পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের দাবি মানেনি। ফলে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) আমাদের কঠোর কর্মসূচি দিতে হয়েছিল। কারণ, রবিবার থেকে ভর্তির আবেদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। আর মাঝখানে দুই দিন শুক্র ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবারই দাবি জানানোর স্বাধীনতা রয়েছে। আবার দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটিও গঠন করতেই পারে। এখন দেখার বিষয় হলো, তদন্ত কমিটি কী প্রতিবেদন জমা দেয়। আমরা আশা করি, তারা সঠিকভাবেই তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেবে।’
এর আগে, গত ২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে তালা দেন আন্দোলনকারীরা। রাত ১০টার দিকে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর তালা খুলে দেন তারা। এই আন্দোলনে দুই উপ-উপাচার্যসহ ২৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছু বহিরাগত থাকা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছিল বিতর্ক।