Homeজাতীয়তাওয়াক্কুল বিষয়ে শাকীক বলখীর (র.) কতিপয় উপদেশ

তাওয়াক্কুল বিষয়ে শাকীক বলখীর (র.) কতিপয় উপদেশ


তাওয়াক্কুল মানে মহান আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালার শক্তি, মর্জি, দয়া ও মেহেরবাণীর উপর পূর্ণ আস্থা আর বিশ্বাসস্থাপন। প্রতিটি বান্দা নিজের জীবনের ভালোমন্দ, অদৃশ্যের লিখন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার ওপর পূর্ণরূপে আস্থা রাখা ঈমানের একটি অংশ। এটি মানুষকে একটি নিশ্চিন্ত জীবনের সন্ধান দেয়। আমাদের জানা মতে, শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, অন্যান্য  ধর্ম ও প্রাচীন  ঐতিহ্য মূল্যবোধগুলোতেও বিষয়টির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করতে দেখা যায়। মানুষ কোনো কিছু পাওয়ার জন্য, সুখ-সমৃদ্ধির জন্য চেষ্টা-তদবীর করবে-এটা ঠিক। তবে এ পথে অযথা হতাশা-বাড়াবাড়ি থাকা উচিত নয়। তাকদীরে বিশ্বাসের ফলে নিজে যেমন সাচ্ছন্দ্য জীবন ও মনের অধিকারী হতে পারেন, তেমনি অন্যকেও আপনি অযথা সৃষ্ট নানাবিধ ঝুট-ঝামেলা থেকে রেহাই দিতে পারেন। এ বিষয়ে কোরআন, হাদিস ও মণীষীদের বহু মূল্যবান বাণী রয়েছে।

আজ আমরা এখানে বিখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাকীক বলখীর (র.) কতিপয় উপদেশের দিকে সম্মানিত পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। মুসলিম আধ্যাত্ম সাধনার জগতে হযরত শাকীক বলখী (র.) একটি উজ্জল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন কিংবদন্তি সাধক পুরুষ ইব্রাহিম আদহামের (র.) যোগ্য সাগরেদ এবং হযরত হাতেম আছম্ম (র.) সুযোগ্য উস্তাদ। বাগদাদের বাদশা হারুনুর রশীদের (খ্রিঃ ৭৮৬-৮০৯) দরবারে তিনি খুব সমাদৃত ছিলেন। কারণ তিনি স্বুধু সাধকই নন, একজন বড় মাপের জ্ঞানী গুণী। তিনি বলেছেন, আমি এক হাজার সাতশ ওস্তাদের সান্নিধ্যলাভ করেছি আর আমি কয়েকটি উট বোঝায় কিতাব পাঠ করেছি। এতো ওস্তাদের সাগরেদ এবং এতো রাশি রাশি কিতাব পাঠকরে সারাংশ এই লাভ করেছি যে, আল্লাহ তায়ালার সন্তোষ নিহিত আছে চারটি বস্তুর মধ্যে: ১। রুটি-রুজি রোজগার সম্বন্ধে আল্লাহর ওপর সোপর্দ করে নিশ্চিন্তে থাকা। ২। প্রত্যেক কাজ খাঁটি নিয়তে আল্লাহ তায়ালার জন্য সমাধা করা। ৩। শয়তানকে মহা শত্রু মনে করা। ৪। মৃত্যুর মাল-সামান সংগ্রহে সর্বদা নিয়োজিত থাকা।

এক ব্যক্তি হযরত শাকীক (র.)-কে বলল: লোকে এই বলে আপনার নিন্দা করে থাকে যে, আপনি লোকের পরিশ্রম ও মজদুরীলব্ধ টাকা ভক্ষণ করেন। আমার সঙ্গে চলুন, আমি আপনাকে যে অর্থদান করবো তা দিয়ে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবেন। তাহলে দুর্নামকারীদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি জানালেন, পাঁচটি দোষ না থাকলে আমি তোমার দান গ্রহণ করতাম : ১। এতে তোমার ভান্ডারে ঘাটতি পড়বে। ২। তোমার দেয়া টাকা চোরে চুরি করার সম্ভাবনা আছে। ৩। তুমি দান করে পরে হয়তো অনুশোচনা করবে। ৪। আমার মধ্যে হয়তো এমন কোন দোষ প্রকাশ পেতে পারে যাতে তুমি তোমার দেয়া অর্থ ফেরত চাইতে পার। তখন আমি পড়ব বড় বেকায়দায়। ৫। তুমি আমার আগে হয়ত মৃত্যুবরণ করতে পার। অতঃপর আমি অর্থের অভাবে পড়তে পারি, তখন তোমার পক্ষ থেকে আমার কোনো সাহায্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমার যে খোদা রয়েছে, তিনি আমার সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, মালিক ও প্রভূ। তিনি আমার বর্ণিত উপরোক্ত দোষত্রুটি, অযোগ্যতা হতে মুক্ত। তাই  আমি তাঁর প্রতিই আস্থাশীল ও করুণা ভিখারী হয়ে থাকব।

বুজুর্গ শাকীক (র.) বলেছেন: আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, কেউ আমাকে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওপর নির্ভর থাকে, তার রুজি খুব বৃদ্ধি পায় এবং স্বভাব ও আচার ব্যবহার খুব ভালো হয়। সে দানশীল হয় এবং তার ইবাদতের মধ্যে শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা অনর্থক চিন্তা-কল্পনা আসতে পারে না। তিনটি বস্তু দরিদ্রতার কাছাকাছি থাকে। যেমনÑ মনের নির্বিকারতা, হিসাব-নিকাশের সহজতা এবং নফসের আরাম। আর ধনাঢ্যতার জন্য তিন বস্তু অনিবার্য: দেহের কষ্ট, মনের চাঞ্চল্য ও কর্মব্যস্ততা এবং হিসাবের কঠোরতা। শাকীক (র.) আরও সুন্দর বলেছেন : আমি সাতশত আলিমকে জিজ্ঞেস করেছি বুদ্ধিমান কে, ধনী কে, জ্ঞানী কে, দরবেশ কে এবং কৃপণ কে? উক্ত আলিম-ওলামা সকলই প্রায় এই জবাব দিয়াছেন যে, যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালবাসে না সে বুদ্ধিমান। যে ব্যক্তিকে দুনিয়া ধোঁকা দিতে পারে  না সে জ্ঞানী। আল্লাহর বিধান ও বন্টনের ওপর যে সন্তুষ্ট সে ধনী। যার অন্তরে বেশির জন্য আকাঙ্কা নেই সেই দরবেশ। আর যে ব্যক্তি খোদার দেওয়া মাল দৌলতকে খোদার বান্দাদের চেয়ে অধিক প্রিয় মনে করে সে ব্যক্তি কৃপণ।

বস্তুত: বিখ্যাত সাধক আলিম, বুজুর্গ, দার্শনিক শাকীক বলখী (র.)-এর উপরোক্ত অভিজ্ঞতালব্ধ বাণীসমূহ থেকে এ শিখলাম যে, সর্বাবস্থায়  আল্লাহর মর্জি ও সন্তুষ্টির ওপর নির্ভরশীল থাকা প্রশান্ত জীবনের পরিচায়ক। আর ধনী বলতে প্রাচুর্য নয়, মন ও বিশ্বাসে ঐশ্বর্যশালী হওয়া বড় কথা। সেদিকে হাদিস ও ইঙ্গিত করেছে। হাদিসে বলা হয়েছে: আল গিনা গিনান নাফস- ধনী সেই যে অন্তরের বিশালত্ব সন্তুষ্টির চিত্তের দিক দিয়ে ধনী।’ আজ দেখছি, দিকে দিকে ধনের বড়াই, ধন ও প্রতিপত্তি নিয়ে বাড়াবাড়ি। আর এ জন্য সমাজে ভাইয়ে ভাইয়ে বিচ্ছেদ, সর্বত্র যেন অবিশ্বাস কাজ করে। এমনি দিনে মণীষীদের মূল্যবান কথাগুলো আমাদের অন্তরে সামান্যতমও জায়গা পায় তাহলে কতো সুপরিবর্তনই না আশা করতে পারতাম আমাদের সকলের জীবন প্রবাহে।

লেখক :  অধ্যাপক, টিভি উপস্থাপক ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খতীব

[email protected]





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত