এতদিন ধরে ভোটাররা কাজী সালাউদ্দিনকে কেন্দ্র করে বাফুফেতে নির্বাচন দেখে আসছিল। ২০০৮ থেকে প্রতিবারই তিনি দাঁড়াচ্ছিলেন, আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিতও হয়েছেন। কোনও সময় কামরুল ইসলাম পোটন, বাদল রায় কিংবা শফিকুল ইসলাম মানিকের মতো প্রার্থীরা বিপরীতে দাঁড়ালেও হালে টিকতে পারেননি। সালাউদ্দিন ঠিকই সুযোগ্য স্ট্রাইকারের মতো নিঁখুতভাবে ‘গোল দিয়ে’ এগিয়ে গেছেন। নির্বাচনে জিতেই টানা ১৬ বছর মসনদে ছিলেন। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি নেই। সালাউদ্দিন যুগ শেষ হচ্ছে। শুরু হতে যাচ্ছে নতুন যুগ। এই নতুন যুগে ২১টি পদের মধ্যে ২০টিতে ভোট হতে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন ৪৫ জন প্রার্থী।
সিনিয়র সহসভাপতি পদে ইমরুল হাসান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে আর ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না। আগামী চার বছর বাফুফে কারা পরিচালনা করবেন, তা কাল শনিবার নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। সকাল ১১টা থেকে কংগ্রেস, এরপর দুপুর ২ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। ১৩৩ জন ভোটার তাদের রায় দেবেন।
নির্বাচনের শুরুতে তরফদার রুহুল আমিন হাকডাক দিয়ে আলোচনায় আসলেও শেষ মুহূর্তে ভোটের যুদ্ধ থেকে সরে যান। তাই নির্বাচনের আমেজ কিছুটা হলেও কমেছে। এবার ১৬ বছর ধরে সভাপতির চেয়ারটা নিজের করে নেওয়া সালাউদ্দিনের জায়গায় লড়ছেন তাবিথ আউয়াল ও এফ এম মিজানুর রহমান। তাবিথ শক্তিশালী প্রার্থী। আগে দুইবার সহসভাপতি ছিলেন। বিপরীতে মিজানুর দিনাজপুরের তৃণমূল সংগঠক। বাফুফেতে কখনও কোনও পদে ছিলেন না। এমনকি সাব কমিটিতেও। অনেকের ধারণা তাবিথের নির্বাচিত হওয়াটা সময়ের বিষয়।
তবে তাবিথ বলছেন অন্য কথা, ‘দেখুন একজন প্রার্থী আমার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। প্রার্থী প্রার্থীই। তাকে হেলাফেলা করে দেখার সুযোগ নেই। আমি নির্বাচনে ভালোভাবে আছি। আশা করছি ভোটাররা যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবে।’
অন্যদিকে এফ এম মিজানুর রহমানের আশা, ‘ফুটবল হলো আমার প্রাণ। ৫০ বছর ধরে আছি। ফুটবলকে তৃণমূল থেকে তুলে আনতে না পারলে কিছু উন্নতি হবে না। আমি অতো ফরমালিটিতে না গিয়ে লক্ষ্য পরিষ্কার করেছি। চিঠি দিয়ে সবাইকে জানিয়েছি কী করতে চাই? কাউন্সিলদের কাছ থেকে ভরসা পাচ্ছি। সবাই বলছে সাহস করে দাঁড়িয়েছেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
তবে আশ্চর্যজনকভাবে তাবিথ কোনও ইশতেহারের ঘোষণা দেননি। নির্বাচিত হলে কী করবেন, হয়তো তা গোপন রাখতে চান। সময় হলে কাজ করে প্রমাণ করবেন।
সিনিয়র সহসভাপতি পদে ইমরুল নির্বাচিত হয়েই অবশ্য ইশতেহার দিয়েছেন। ফুটবল ৩৬০ ডিগ্রি নামে সেই ইশতেহারে উন্নয়নের নানান দিক ঘোষণা করা হয়েছে। ইমরুল বলেছেন, ‘চার বছরে কীভাবে ফুটবল উন্নয়ন করা যায় তারই দিকনির্দেশনা আছে। আমি আশা করবো নতুন কমিটি তা সামনে রেখে কাজ করে যাবে।’
সহসভাপতির চারটি পদে ছয়জন নির্বাচন করছেন। সবাই নতুন মুখ। আছেন সাবেক তারকা খেলোয়াড় সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের মতো প্রার্থীও। কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ফুটবল অনুরাগী নাসের শাহরিয়ার জাহেদীও নির্বাচন করছেন। সবাই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
১৫টি সদস্য পদে ৩৭ জন দাঁড়িয়েছেন। এরমধ্যে বিতর্কিত মাহফুজা আক্তার কিরণ ও ফিফা থেকে নিষিদ্ধ আবু নাইম সোহাগের স্ত্রী রেজওয়ানাও রয়েছেন। সবাই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। শেষ মুহূর্তে চাইছেন ভোট।
নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুত আরও একটি নির্বাচন আয়োজনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত। কাল আশা করি সুষ্ঠভাবে ভোট হবে। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে সম্পন্ন হবে।’
ক্রীড়ামোদীদের আশা, দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবল চালানোর জন্য ভোটাররা দেখেশুনে রায় দেবেন, যেন সামনের দিকে খেলাটা ঘুরে দাঁড়ায়।